সাজা এড়াতেই রাজনৈতিক আশ্রয়ে তারেক রহমান, মনে করে আ.লীগ

তারেক রহমান ও আওয়ামী লীগআদালতের দেওয়া সাজা এড়াতেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে না ফিরে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন বলে মনে করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের মতে, প্রকৃত রাজনীতিবিদরা কখনও রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে পারেন না। তারেক রহমান বাংলাদেশে থাকতে যেসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, সেজন্য আইনের মুখোমুখি তাকে হতেই হবে। এ কারণেই তিনি লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন।

বিষয়টি এতদিন প্রকাশ না করার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই বিএনপি বিষয়টি লুকিয়ে রেখেছিল। এখন জানাজানির পরও তারা লুকোচুরির চেষ্টা করছে। তবে শেষ পর্যন্ত তারা সত্যটা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, তারেক রহমানের সত্য গোপন করার প্রধান কারণই ছিল আইনগত। দেশের আদালতে চলমান মামলাগুলোতে তাকে হাজির করার জন্য আদালত থেকে বারবার নোটিশ দেওয়া হলেও তার আইনজীবীরা প্রত্যেকবারই বলেছেন, তিনি অসুস্থ, চিকিৎসার জন্য বিদেশ রয়েছেন। এই মিথ্যাচার করে তারা আদালত থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি যে অসুস্থ নন, রাজনৈতিক আশ্রয়ে লন্ডনে রয়েছেন; এটা প্রকাশ পেলে আদালত থেকে ভিন্ন আদেশ আসতে পারে– এটা ভেবেই তারা আগাগোড়া মিথ্যাচার চালিয়েছে। আদালতকে বিভ্রান্ত করেছে।

মিথ্যাচারের মাধ্যমে বিষয়টি আর গোপন রাখার সুযোগ না থাকায় বিএনপি রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয়টি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারেক রহমানের ভেতরে এমন কোনও অপরাধবোধ রয়েছে, যে কারণে নিজেই মনে করছেন তার দেশে ফেরা উচিত হবে না। আর ফিরলে যৌক্তিক কারণেই তিনি গ্রেফতার হতে পারেন। দেশের মানুষ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হতে পারেন। এ কারণে তিনি দেশে ফেরার চিন্তা না করে পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম গ্রহণ করেছেন।’

বিষয়টি নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে লুকোচুরির অভিযোগ তুলে আবদুর রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক শঠতা দিয়ে দেশের মানুষকে বোকা বানাতে তারা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যখন তা আর সম্ভব হয়নি তখন বাধ্য হয়েই সত্যটি স্বীকার করেছে। বিএনপি যে শঠতা ও মিথ্যাচারের রাজনীতি করে–এই ঘটনার মাধ্যমে তা আবারও প্রমাণ হয়েছে।’

তিনি মনে করেন, প্রকৃত রাজনীতিবিদ কোনও অবস্থাতেই বিদেশে আশ্রয়ে থাকতে পারেন না। নিজ দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেই তার সম্পৃক্ত থাকা উচিত ছিল।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘বিএনপি বিষয়টি নিয়ে সবসময় লুকোচুরি করেছে। তবে আমরা জানতাম তারেক রহমান রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। এজন্য আমি নিজেও বারবার ব্রিটিশ সরকারকে তারেকের রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিধান ভঙ্গ করে নানা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করার কথাটি বলেছি। তাদের বিষয়টি দেখতেও বলেছি।’

কোন দেশে কারও জীবন হুমকির সম্মুখীন হলে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে থাকেন, তারেক রহমানের জন্য বাংলাদেশ কী হুমকি ছিল–এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, ‘বাংলাদেশ কারও জন্যই হুমকি নয়। তার দলের নেতারা তো দেশে রয়েছেন। তারাও এখানে থেকে রাজনীতি করছেন। হুমকি মনে করলে তো তারাও থাকতেন না। তবে বিএনপির আজকের পরিণতির জন্য দলের নেতারাও তারেক রহমানকে দায়ী করেন–এজন্য হয়তো তিনি তার দলের লোকজনকে হুমকি মনে করতে পারেন। তিনি ভাবতে পারেন তার অপকর্মের জন্য নিজ দলের লোকেরাই তার ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ কোনও নাগরিকের জন্য হুমকি নয়, তারেকের জন্যও নয়।’

রাজনৈতিক আশ্রয় থাকা ও দণ্ডপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি নৈতিক কারণে কোনও দলের প্রধানের পদে থাকতে পারেন না বলেও মন্তব্য করেন ফারুক খান। তিনি বলেন, ‘বিএনপির মধ্যে যোগ্য কোনও নেতৃত্ব না থাকার কারণেই এ ধরনের একজন রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্ত অপরাধীকে দলের প্রধান করা হয়েছে। এজন্য তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে গেছেন যে বাংলাদেশে আর কোনও দিন ফিরে আসবেন না। রাজনীতিও করবেন না। যারা মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়েছে, তারা রাজনৈতিক আশ্রয় নিতেই পারে।’