বিএনপিকে দাঁতভাঙা জবাব দিতে গণমাধ্যমে সরব আ. লীগের একাধিক নেতা





আওয়ামী লীগসাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পাশাপাশি এখন থেকে গণমাধ্যমে সরব থাকবেন আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। এসব নেতা ইস্যুভিত্তিক বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির বক্তব্যের জবাব দেবেন। পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও তুলে ধরবেন তারা। এক্ষেত্রে যে নেতা যে বিষয়ে তথ্যসমৃদ্ধ তাকে সেই ইস্যুতে কথা বলতে দেওয়া হবে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন নির্দেশনা দিয়েছেন বলে দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন।
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার বাস্তবায়নও চোখে পড়েছে। এর অংশ হিসেবে গত তিন দিনে দলের তিনজন নেতা গণমাধ্যমে কথা বলেছেন। পাশাপাশি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও গণমাধ্যমে তার সক্রিয়তা অব্যাহত রেখেছেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সভাপতিমণ্ডলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদক পর্যায়ের নেতাদের বিভিন্ন ইস্যুতে, বিএনপির মিথ্যা অভিযোগ, সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের জবাব দিতে দলের ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বিএনপির যগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করলে আওয়ামী লীগের পক্ষে এর জবাব দেবেন প্রচার ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করলে আওয়ামী লীগের পক্ষে পাল্টা কথা বলবেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ-নজরুল ইসলামরা মিথ্যাচার করলে তাদের জবাব দেবেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে প্রতিনিয়ত কথা বলতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন। মাঠে-ঘাটে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে কথা বললেও দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা এখন অনেকটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অন্যদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের জাতীয় রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা তো বলবেনই।
সম্পাদকমণ্ডলীর অন্তত তিনজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দলীয় প্রধানের এই নির্দেশনা এরই মধ্যে নেতাদের অবহিত করেছেন ওবায়দুল কাদের। এরই অংশ হিসেবে গত তিন দিনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ ও প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ ধানমন্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির বিভিন্ন বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকার সময় জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কোনও ইস্যু ছাড়া তিনি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতেন না। সে সময় আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে দলের মুখপাত্র নিয়োগ দেওয়া না হলেও মধ্যম পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা বিভিন্ন ইস্যুতে দলের পক্ষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতেন। তাদের কাউকে কাউকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেই কথা বলার জন্য বলতেন। এতে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আশরাফেরও মৌন সন্মতি ছিল বলে জানা যায়।
সবশেষ সন্মেলনে নতুন নেতৃত্ব আসার পরে এই দৃশ্যপট কিছুটা পাল্টে যায়। দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক গণমাধ্যমবান্ধব হওয়ায় প্রথমদিকে অন্য নেতাদের কথা বলার প্রয়োজন পড়েনি। তবে সম্মেলনের কিছু দিন পর সাধারণ সম্পাদককে প্রধান মুখপাত্রের দায়িত্বের পাশাপাশি দলের ৪ নেতাকে মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা হলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দীপু মনি ও প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ। অবশ্য এই দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। এদিকে এই ৪ নেতাকে মুখপাত্রের দায়িত্ব পাওয়ার পরও কথা বলতে খুব একটা দেখা যায়নি।
এদিকে গত বছরের মাঝামাঝিতে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ওই সময় তিনি আগে গণমাধ্যমে সক্রিয় থাকা নেতাদের নিষ্ক্রীয় হওয়ার কারণ জানতে চান। একইসঙ্গে ওইসব নেতাকে দলের হয়ে বেশি বেশি কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।