‘১৫ আগস্ট যারা কেক কাটে, তাদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না’

বক্তব্য রাখছেন ড. হাছান মাহমুদআওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ১৫ আগস্ট যারা কেক কাটে, তাদের সঙ্গে সংলাপ হবে না। সোমবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আপনারা ষড়যন্ত্র করবেন, আর আমরা সংলাপ করতে চাইবো, এটা তো হতে পারে না। ১৫ আগস্ট কেক কাটবেন, শিশুদের ঘাড়ে বসে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করবেন, দেশে-বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করবেন, আবার সংলাপ করবেন, সেটা তো হবে না। যারা পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে, যারা বিভিন্ন সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অরাজকতার পরিবেশ তৈরি করেছে, যারা আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে অপরাজনীতি করার চেষ্টা করেছে, যারা ১৫ আগস্ট কেক কাটে, তাদের সঙ্গে কোনও অবস্থাতেই সংলাপ হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দল এত দৈন্যদশায় পড়েনি যে যেই দল কানাডার আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, সেই দলের সঙ্গে সংলাপ করতে হবে।’

বিএনপির যে অপরাধপ্রীতি—তার জন্য তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, এমন দাবি করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২০১৩ ও ২০১৪ সালে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করার জন্য তারা আজকে জনবিচ্ছিন্ন। তারা দেশে বিভিন্ন সময় বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এরপর তারা অন্যদের ঘাড়ে চড়ে দেশে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। প্রথমে তেল-গ্যাস কমিটি, তারপর কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ভর করে ব্যর্থ হয়ে, এরপরে তাদের মানসিকতা এত নিচু যে আমাদের শিশু-কিশোরদের ঘাড়ে চড়ে সরকার পতনের চেষ্টা করেছে। সবকিছু ব্যর্থ হয়ে এখন বলছেন, আমাদের একটু ডাকেন, আমরা কথা বলতে চাই। আমরা একটা সংলাপ করতে চাই।’

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডকে উপহাস করার জন্য খালেদা জিয়া ভুল জন্ম তারিখে জন্মদিন পালন করেন, এমন দাবি করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তিনি একজন রাজনীতিবিদ, যিনি জন্মের তারিখ পাল্টে দিতে পারেন। বিয়ের রেজিস্ট্রারে একটা জন্মের তারিখ, তিনি প্রথম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার যে ক্রেডেনশিয়াল— সেখানে একটি জন্ম তারিখ, তার মেট্রিকের সার্টিফিকেটে এক জন্ম তারিখ, স্কুলের সার্টিফিকেটে এক জন্ম তারিখ, আর হঠাৎ করে ৯২-৯৩ সালের দিক থেকে তিনি ১৫ আগস্ট কেক কাটা শুরু করলেন। অথচ ১৯৯৩ সালে তিনি তখন প্রধানমন্ত্রী। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, সেই ক্রেডেনশিয়ালে অন্য জন্ম তারিখ। আর দুই বছর পর উনার জন্ম তারিখ হঠাৎ করে বদলে গেলো। যিনি এরকম মানসিকতার অধিকারী, যদি ইউরোপের কোনও দেশে হতো, তাহলে রাজনীতিতে বহু আগে অযোগ্য হতেন। খালেদা জিয়ার ভাগ্য ভালো শুধু কয়েকটি মামলা হয়েছে, রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা হননি।’

সংলাপ প্রয়োজন হলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে করুন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন তো সরকারের অধীনে হয় না, নির্বাচন হয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচনের সময় সরকার দায়িত্ব পালন করে মাত্র। যারা বলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই না, তারা সংবিধানটা ভালো মতো পড়েননি। আপনাদের অনুরোধ জানাবো, সংবিধান এবং নির্বাচনি আইন দয়া করে ভালো মতো পড়ুন। নির্বাচন সরকারের অধীনে হয় না। এখানেও হয় না, অন্য কোনও দেশেও হয় না। বাংলাদেশেও আগামী নির্বাচন কমিশনের অধীনেই হবে। তখন সরকার শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। আপনাদের যদি আলোচনা করতেই হয়, আপনারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ করুন। এখানে নির্বাচন নিয়ে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। আজ থেকে ৫০ কিংবা ১০০ বছর পর যারা ইতিহাস পড়বে, তারা জানবে কারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। কাদের বিচার হয়েছিল। কাদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। কিন্তু ১০০ বছর পরের প্রজন্ম জানবে না কারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পটভূমি রচনা করেছিল, কারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল, যদি না আমরা এই ষড়যন্ত্র মানুষের সামনে উন্মোচিত না করি। সেজন্য জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানানোর জন্য এবং ইতিহাসের পাতাকে কালিমামুক্ত করা এবং সত্য প্রকাশের স্বার্থে একটি কমিশন গঠন করে জিয়াউর রহমানসহ যারা জড়িত ছিল, সেগুলো শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করার দাবি জানাই। তাহলেই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।’

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।