সংশয় থাকলেও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ধর্মভিত্তিক দলগুলো






islami bastobayon committee

নির্বাচনকালীন সরকার, ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ও সেনা মোতায়েনসহ নানা বিষয়ে সংশয় থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে ধর্মভিত্তিক দলগুলো। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি দল প্রাথমিকভাবে তাদের প্রার্থী তালিকাও চূড়ান্ত করেছে। ভোটের জন্য সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় চালাচ্ছে জনসংযোগও।
জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়েই সংশয় বেশির ভাগ ইসলামি দলের। নির্বাচনের আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবিও জানিয়েছে বেশ কয়েকটি দল।
ইসলামি দলগুলোর নেতারা মনে করেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বর্তমান সংসদ বহাল থাকলে নির্বাচন প্রভাবমুক্ত হবে না। তাদের দাবি, নির্বাচনে সব দলের সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকা তৈরি করেছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। স্থানীয় নির্বাচনে ভালো ফল করায় এককভাবেই সারাদেশে ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। বিভ্ন্নি জোটে যাওয়ার প্রস্তাব থাকলেও ইসলামী আন্দোলন তাতে সাড়া দিচ্ছে না। সম্প্রতি ইভিএম ব্যবহার নিয়েও আপত্তি তুলেছে তারা।
এ প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘এককভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে ইসলামী আন্দোলন প্রস্তুতি নিচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। আমরা আশাবাদী।’
মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে জাতীয় ঐক্যমত্য প্রয়োজন। নির্বাচনের আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে না দিলে মানুষের কোনও আস্থা থাকবে না। দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কথা বলছি। ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, কারচুপি ও অনিয়ম না ঘটলে ইসলামী আন্দোলন জাতীয় নির্বাচনে ভালো ফল পাবে।’
দেশে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে রয়েছে খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। তবে আন্তঃকোন্দলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এখন দু’ভাগ। এই দুটি দলেরই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে জোটের মধ্যে আসনবণ্টনের পর। যদিও দুটি দল নিজেদের মতো নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দুটি অংশই আগামী নির্বাচন নিয়ে কাজ করেছে। একটি অংশের নেতৃত্বে আছেন নূর হোসাইন কাসেমী, অন্য অংশে মুফতি ওয়াক্কাস।
নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া প্রসঙ্গে মাওলানা নূর হোসাইনের নেতৃত্বাধীন অংশের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে প্রার্থী ঠিক করছি। তবে একইসঙ্গে জোটের সঙ্গে সমঝোতার ব্ষিয়ও রয়েছে। এ বিষয়গুলো ঠিক হলে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। জোটের সঙ্গে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে সব কিছু চূড়ান্ত হবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার মাত্র দুই মাস আগে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে নির্বাচন বিতর্কিত হবে।’
বিএনপি-আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক জোটের বাইরে ছিল বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। তবে গত ১১ আগস্ট নির্বাচনি সমঝোতায় জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ খেলফত মজলিস। দলটির মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের জোট নির্বাচনকেন্দ্রিক। ইসলামী দলগুলো নিয়ে জোট গঠনের জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু সম্ভব হয়নি। জোটের শরিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই নির্বাচনের সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে।’
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী ইসলামী ঐক্যজোট। দলটি দুই যুগ ধরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ছিল। ২০১৭ সালের ৭ জানুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে ‘ইসলামী ঐক্য’ গড়ার কথা বললেও তা গড়তে পারেনি। তবে দলটির সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে বলে জানা গেছে।
আগামী সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘আমরা এককভাবেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রায় ৩০০ আসনেই প্রার্থী তালিকা করা হচ্ছে। তবে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে কোনও ঐক্য হয় কিনা, সেটিও দেখার বিষয়।’