যেভাবে নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ

পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষসকাল থেকেই রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৃতীয় দিনের (বুধবার, ১৪ নভেম্বর) মতো মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভিড় শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে একটি মিছিল কার্যালয়ের সামনে আসে। এ সময় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আরও কয়েকটি মিছিল দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হয়। তখন কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল। হঠাৎ বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। প্রাথমিকভাবে আমাদের ৮-১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। আহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাদের দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি।’

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ বেলা সোয়া একটার দিকে হাজার হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়। আমাদের ৭-৮ জন পুলিশ সদস্য নেতাকর্মীদের রাস্তা ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা অনুরোধ না শুনে পুলিশ সদস্যদের ওপর চড়াও হয়। তখন পাশে থাকা আমাদের পেট্রোল টিম এগিয়ে আসে। তারাও হামলার শিকার হয়। আমাদের ১৩ জন পুলিশ সদস্য আহত  হয়েছেন।’

বিএনপি নেতাদের দাবি, ঘটনার সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা নেতাকর্মীদের ফুটপাতের দিকে অবস্থান নেওয়ার জন্য রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন এবং তাদের ফুটপাতের দিকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন উপস্থিত নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং রাবার বুলেট ছোড়ে। তখন বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে উদ্দেশ করে ইটপাটকেল, জুতা এবং অন্যান্য বস্তু নিক্ষেপ করতে থাকে। 

পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষ

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দুপুর একটার দিকে সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে সরে গিয়ে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে, বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন এলাকার বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে স্কাউট ভবন পর্যন্ত মিছিল করেন। এ সময় পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান এবং একটি প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেন নেতাকর্মীরা। এছাড়া, তারা রাস্তায় চলাচলকারী কয়েকটি গাড়ি এবং মোটরসাইকেলের গ্লাস ভাঙচুর করেন।

পুলিশের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের এই সংঘর্ষের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাত দিয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীদের আমি অনুরোধ করবো, আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে ফুটপাতে অবস্থান গ্রহণ করুন। রাস্তায় গাড়ি চলাচলের সুযোগ করে দিন। এটি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের নির্দেশ।’


পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষ

পুলিশ বিনা উসকানিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর গুলি করেছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘সকাল থেকে নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা গত দুদিন শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়েছিলাম। আজকে বিনা উসকানিতে হামলা করা হয়েছে। হামলাকালে আমাদের আব্বাস, নাহিদ, মুকুল, মোস্তফা, স্বপন, হারুনসহ ২০ জনের মতো নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’ 

 আরও পড়ুন

বিএনপি আবারও প্রমাণ করলো তারা সন্ত্রাসী দল: কাদের