‘বিদ্রোহ দমনে’ আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ





আওয়ামী লীগদলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নেতাকর্মীদের বশে আনার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে ‘বিদ্রোহী’ এসব প্রার্থীর সঙ্গে কেন্দ্র থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কাজের সঙ্গে যুক্ত নেতারা বলছেন, দলের যেসব নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে তারা সবাই প্রত্যাহার করবেন। আর যেসব আসনে একাধিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আগামী ৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই সেখানেও একজনকে চূড়ান্ত করা হবে।
আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, কে বা কারা দলের চূড়ান্ত প্রার্থী তা জানিয়ে এবার নির্বাচন কমিশনে দুইটি চিঠি দেওয়া হবে। এর একটি হলো ৩০০ আসনের পূর্ণাঙ্গ তালিকা আর আরেকটি হবে একাধিক আসনে মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে চূড়ান্ত মনোনীতদের তালিকা।
এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যতম শীর্ষ নেতা দলীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তারা প্রথমে কারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন তাদের চিহ্নিত করেছেন। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রায় সবাই মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে রাজি হয়েছেন। আশা করি, ৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই সবাই প্রত্যাহার করবেন।
প্রসঙ্গত, দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সারাদেশে ৭৬টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। প্রার্থীতা বাছাইয়ে এর মধ্যে ২৯টি বাতিল হয়ে গেছে। এখনও ৪৭ জন আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে চাইছেন। কিন্তু তারাও শেষ পর্যন্ত প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেবেন বলে আত্মবিশ্বাসী এ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় নেতারা।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যারা নির্বাচন করছেন না বা করতে চেয়েও মনোনয়ন পাননি অথবা আগে সংসদ সদস্য ছিলেন, কিন্তু এবার মনোনয়ন পাননি, তাদের স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হওয়া নেতাদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখাসহ অন্যান্য নির্বাচনি কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর এ দায়িত্ব দিয়েছেন স্বয়ং দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারের কাজ দেওয়া নেতারা হলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ এবং বি এম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন। এই কমিটিকে সহযোগিতা করবেন কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেনসহ আরও বেশ কয়েকজন।
গত ২৯ নভেম্বর এই নেতাদের নিজের সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে নির্বাচনি নানা কাজের নির্দেশনা দেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে ১ ডিসেম্বর দলের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করে দেশের বিভিন্ন স্থানের যেসব দলীয় নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন, তাদের চিহ্নিত করা হয়। পরে তাদের সঙ্গে ফোনে অথবা সামনা-সামনি বসে কথা বলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবারও (৪ ডিসেম্বর) দলীয় কার্যালয় থেকে অনেককে ফোন করা হয়। আর কার্যালয়ে ডেকে কথা বলা হয় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ কাদের খানের সঙ্গে। জানা যায়, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, মেহেরপুর-১ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়নাল আবেদীন, ময়মনসিংহ-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীম, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাতক্ষীরা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের অনেককেই ‘ম্যানেজ’ করতেও পেরেছেন তারা। আর অনেককে দলের সভাপতির কাছেও পাঠানো হয়। এরপর সবাই মনোনয়ন প্রত্যাহারে রাজি হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করে।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী আছে ১৭টি আসনে। আসনগুলো হলো রংপুর-৬, নওগাঁ-৫, নাটোর-১, নড়াইল-১, বরগুনা-১, পটুয়াখালী-২, টাঙ্গাইল-২, জামালপুর-১ ও ৫, কিশোরগঞ্জ-১, ঢাকা-৫, ৭ ও ১৭, চাঁদপুর-১, ২ ও ৪ এবং লক্ষ্মীপুর-২ আসনে। এছাড়া ৪৬ আসনে দল মনোনিত প্রার্থীর পাশাপাশি দলীয় কোনও না কোনও নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন। আর নড়াইল-১ আসনে ১৪ দলের শরিক জাসদ একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া মনোনয়ন পেলেও সেখানকার সাবেক এমপি কবিরুল হক মুক্তিকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়।
ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে।