জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন দাবি করা ওলামা লীগ শিক্ষানীতি পরিবর্তন, মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণে বিরোধিতা, ধর্ম অবমাননার জন্য মৃত্যুদণ্ডের আইন প্রণয়ন, পয়লা বৈশাখ উদযাপন বন্ধ, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য অপসারণ ইত্যাদি দাবিতে সক্রিয় ছিল ওলামা লীগ। সংগঠনটি নিজেদের দাবি জানাতে সব সময়ই মানববন্ধন করেছে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। কখনও কখনও গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েও দাবি জানিয়েছে তারা। এর বাইরে অন্য কোনও কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
গত সোমবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে ওলামা লীগ। মানববন্ধন থেকে তারা দাবি জানায়, দেশে বাল্যবিয়ে নিরোধে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
বাল্যবিয়ে বন্ধে জড়িতরা মুসলিমবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত— এমন অভিযোগ করে এ কাজে সম্পৃক্ত এনজিও নিষিদ্ধের দাবি জানান ওলামা লীগের নেতারা। দলটির নেতারা বলেন, সরকার দেশে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন প্রণয়ন করলেও দেশে ১৮ বছরের নিচের ছেলে-মেয়েদের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলে অবৈধ গর্ভপাত, ভ্রূণহত্যা ও কুমারি মায়ের সংখ্যা।
একই মানববন্ধনে ওলামা লীগের নেতারা দাবি করেন, ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ করা হলে তা হবে বৈষম্যমূলক ও সাম্প্রদায়িক। মানববন্ধনে ওলামা লীগের সভাপতি মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী উপস্থিত ছিলেন।
তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওলামা লীগের সম্পর্কের দাবি উত্থাপন এবং আওয়ামী লীগের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নাকচ করার ঘটনা— কোনোটিই নতুন নয়।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন করেছে ওলামা লীগ। আর তাদের দাবি নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগও নাকচ করেছে তাদের সঙ্গে ওলামা লীগের কোন ধরনের সম্পর্কের কথা।
বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন বাতিল চেয়ে ওলামা লীগ ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন করে। সেই মানববন্ধন থেকে ১৬ দফা দাবি তোলে সংগঠনটি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে তোলা তাদের দাবিগুলো ছিল, শিক্ষানীতি বাতিল, শিক্ষা আইন পাস না করা, লাক্স-চ্যানেল আই’র উদ্যোগে সুন্দরী প্রতিযোগিতা বন্ধ করা, অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল করা ইত্যাদি।
২০১৭ সালের ৪ মার্চ বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন বাতিলসহ ছয় দফা দাবি জানায় আওয়ামী ওলামা লীগ। সেদিনও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এসব দাবিতে মানববন্ধন করে সংগঠনটি। একই মানবন্ধনে ওলামা লীগ হাইকোর্টের সামনের মূর্তি অপসারণের দাবি তোলে।
সুপ্রিম কোর্টে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন বন্ধের দাবিতে ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি মানববন্ধন করে ওলামা লীগ।
ওলামা লীগের এমন সব বিতর্কিত দাবি উত্থাপন ও বক্তব্য দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে ১৩ এপ্রিল আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘ওলামা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনও সম্পর্ক নেই।’
জানতে চাইলে আওয়ামী ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মাওলানা মো. আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শরিয়ত মোতাবেক যেসব বিষয় ঠিক নয়, তা নিয়েই কথা বলেছি। নিজেদের মনগড়া কোনও বক্তব্য দিইনি। দল যখন ক্ষমতায় ছিল না তখনও আমরা ছিলাম। আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শে মেনেই আমরা আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুগত্যে আমাদের সংগঠন পরিচালিত হচ্ছে। আমরা দলের সুসময়ের এসে নেতা হইনি। আমরা কোনও সুবিধা চাইও না। তবে আমাদের কোনও বক্তব্য নিয়ে দলের আপত্তি থাকলে জানাতে পারতো, এভাবে সম্পর্ক নেই বলে বিবৃতি দেওয়া ঠিক হয়নি।’
আরও পড়ুন...