‘কাদেরের কথাই প্রমাণ করে সরকারের নির্দেশেই খালেদা জিয়া বন্দি’

রুহুল কবির রিজভী ও ওবায়দুল কাদেরবিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের মধ্য দিয়েই প্রমাণিত খালেদা জিয়াকে সরকারের নির্দেশেই আটকে রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে (৪ জুন) রাজধানীর নয়া পল্টনে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ অভিযোগ করেন।  সোমবার (৩ জুন) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন,‘বিএনপির চেয়ারপারসন কারাগারে বন্দি। আপনারা সরকার ও আদালতের ওপর কতটা চাপ প্রয়োগ করতে পেরেছেন? আপনারা কি চরমভাবে ব্যর্থ নন? সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠায়নি। আদালতের রায়ে তিনি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি কোনও উত্তাপ সৃষ্টি করতে পারেনি।’

ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে রিজভী বলেন, ‘গত কয়েকদিন যাবত সরকারের মন্ত্রী ও কতিপয় নেতা বিএনপিকে উদ্দেশ করে লাগামছাড়া বক্তৃতা দিচ্ছেন। ঈদ-উল ফিতরের প্রাক্কালে খুব বিস্মিত হচ্ছি, তাদের কথা শুনে। তারা কথার তাল-লয় হারিয়ে ফেলছেন বলে অনুমিত হচ্ছে। ওবায়দুল কাদেরের এসব কথা শুনে আবারও সুপ্রমাণিত হলো যে, খালেদা জিয়া আইনি প্রক্রিয়ায় নয়, অবৈধ আওয়ামী সরকারের নির্দেশেই কারাগারে বন্দি।’

রিজভী প্রশ্ন করেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনিতো ভিনগ্রহের বাসিন্দা বা এলিয়েন নন। কিন্তু আপনি আসল সত্যটা বলতে পারবেন না মন্ত্রীত্ব রক্ষার স্বার্থে। দেশের বিচার ব্যবস্থা কি স্বাধীন, কাদের সাহেব? যে দেশের প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়, সেখানে কি ন্যায় বিচার পাওয়ার সুযোগ থাকে? যে দেশের বিচারককে ন্যায়বিচারের রায় দেওয়ার পর রাতের আঁধারে পালিয়ে দেশত্যাগ করতে হয়, সেদেশে কি মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে? আইন, আদালত, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবইতো প্রধানমন্ত্রীর হাতে বন্দি। আপনার নেত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে বসে যে স্বীকারোক্তি ও হিংসাত্মক ঘোষণা দিয়েছেন, তা সারাদেশের মানুষসহ বিশ্ববাসী শুনেছে। আপনিও এখন সে কথাই বলছেন।’

রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন তার ইচ্ছা ও প্রতিহিংসায় খালেদা জিয়ার বাঁচা-মরার শর্ত। অন্যকোনও কারণে নয় শেখ হাসিনা প্রতিহিংসা পূরণে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আজ  কারাগারে। কেবল তাই নয়, বাড়াবাড়ি করলে সারাজীবন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হবে— ঘোষণা দিয়ে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশনেত্রীকে কেরানীগঞ্জ কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে বন্দি রাখার পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার জামিনযোগ্য জামিন বন্ধ রেখেছেন।’

কাদেরের প্রতি রিজভী বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব, আপনার নেত্রীকে জিজ্ঞেস করবেন কি, তিনি আর কতদিন ক্ষমতালিপ্সায় বাংলাদেশের প্রাণ প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে শাস্তি দেবেন? আর কতদিন লাগবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে? দেশের প্রতিটি মানুষ জানেন,আইনি লড়াইয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। কারণ, আইনি প্রক্রিয়া শেখ হাসিনার আঁচলে বন্দি।

রিজভী আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘৭৪ বছর বয়সী গুরুতর অসুস্থ একজন মহিয়সী নারীকে আর বন্দি রাখবেন না। তার সুচিকিৎসা ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করার সুযোগ দিন। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রের খরচে বিশাল লটবহর-লোক লস্কর নিয়ে ফিনল্যান্ডে গেছেন ঈদ করতে, আর দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী  খালেদা জিয়াকে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে  পঞ্চমবারের মতো ঈদ করছেন। একজন সরকার প্রধান কতটা অমানবিক ও নিষ্ঠুর হলে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রোশে চারবারের প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে কারাগারে বিনা দোষে বন্দি রাখতে পারে! পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম প্রতিহিংসাপরায়ণতার কদর্য ঘটনা বিরল।’

বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, ‘ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গণপরিবহনে যে সীমাহীন নৈরাজ্য চলছে, ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। ২০০ টাকার ভাড়া ৮০০ টাকা, ৫০০ টাকার ভাড়া ২০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে, রাজধানীর অভ্যন্তরীণ পরিবহনে ৫০ টাকার নিচে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। ভাড়া নিয়ে গণপরিবহনের লোকেরা যাত্রী সাধারণের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করছে, লাঞ্চিত করছে। মহাসড়কে দুর্বিসহ যানজটে পড়ে মানুষ সীমাহীন কষ্ট করছে। এগুলো দেখার কেউ নেই। গণপরিবহনে এ নৈরাজ্যের জন্য দায় ওবায়দুল কাদের সাহেবরা এড়াতে পারেন না।’

রিজভী বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের ব্যর্থতার দায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পদত্যাগ করতো। কিন্তু বংশানুক্রমিকভাবে পদত্যাগের জিন আওয়ামী নেতাদের মধ্যে নেই।’