বাজেটে ধনী ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করছে সরকার: বিএনপি

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসংসদেও গরিব জনগণের স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ধনী ও ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থই রক্ষা করছে সরকার। ক্ষুদ্র ও প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।’ শুক্রবার (১৪ জুন) বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাজেট নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ধনিক শ্রেণি সৃষ্টিতে বাংলাদেশ বিশ্বমানচিত্রে এক নম্বরে রয়েছে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এসব ধনিক শ্রেণির সবাই সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট।’

বাজেটের পরিকল্পনা, বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া, খাতভিত্তিক বরাদ্দ ও সমস্যা নির্ধারণ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাজেটে আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ বেশি। প্রতিবছরই বাজেটে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ঘাটতি মেটাতে ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। বাস্তবায়নের হারেও দেখা যায় নিম্নমুখিতা।’

বাজেটের পরে প্রতি বছর বিরোধী দল মিছিল করে, এবার করা হবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি।’

দেশের অর্থনীতি কিছু সংখ্যক মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা বাজেট প্রণয়ন করছে। তারা অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। আবার তারাই সরকার পরিচালনা করছে। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ঋণনির্ভর বাজেট দিতে হচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কেন বাজেটে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখা হয়েছে? এর উত্তর হলো, ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, সেটা ২৯ তারিখ রাতে ডাকাতি করতে হলো। জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে এই স্বৈরাচারী সরকারকে হটিয়ে তাদের সরকার প্রতিষ্ঠিত করবে। যারা ২৯ ডিসেম্বর রাতে ডাকাতি করে এ সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, তাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য এই বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘কৃষকরা তাদের ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু এবারের বাজেটেও তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণের ব্যাপারে কোনও প্রস্তাব বা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। যত বড় প্রজেক্ট, তত বড় দুর্নীতি। সরকার দুর্নীতির সমস্ত পথ উন্মুক্ত রেখেছে।’

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘এর আগে দেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে কোনও ব্যবসায়ী অর্থমন্ত্রী হননি। ফলে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ী হলে তিনি তো ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখবেন, এটাই স্বাভাবিক। সেখানে সাধারণ মানুষের স্বার্থ উপেক্ষিত হবেই।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে যখন গণতন্ত্র থাকে না, একটি গোষ্ঠী যখন সমস্ত ক্ষমতা তাদের হাতে নিয়ে নেয়, তারা তখন রাজনীতি করে, ব্যবসা করে, আবার দেশও পরিচালনা করে। তারা শেয়ারবাজারও পরিচালনা করে। তাদের স্বার্থে যত বড় অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তারাই কিন্তু সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।’
সরকার কেন তাদের স্বার্থে সিদ্ধান্ত না নিয়ে জনগণের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেবে প্রশ্ন রেখে খসরু বলেন, ‘কারণ তারা এই জায়গাটা দখল করে বসে আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস প্রমুখ।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সংসদে অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করার পর সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমদু চৌধুরী বলেছেন, ‘এই সরকারের বাজেট দেওয়ার নৈতিক অধিকার নেই। এটি একটি ঋণনির্ভর বাজেট।’ তবে, ওই প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে বাজেট নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও প্রস্তাবনা ছিল না।