দুর্নীতির অভিযোগ এনে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান বিএনপির

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাসীন নেতাদের গ্রেফতারের কয়েকটি ঘটনায় সরকারের গলার স্বর কমে গেছে মন্তব্য করে এর দায় নিয়ে তাদের পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।  শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে গুলশানের চেয়ারপারসন কার্যালয়ে কমিটির বৈঠক শেষে দলের এ অবস্থান তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন,‘ দেখবেন যে তাদের (সরকার) গলার স্বরও কমে গেছে আজকাল। যেভাবে জোর গলায় কথা বলতো এখন তারা নিজেরাই ধরা পড়ে গেছে। আমাদের তো অপেক্ষা করতে হয় নাই। তাদের লোকেরাই সব ধরিয়ে দিচ্ছে, ধরা পড়ছে তারা।’

তিনি বলেন,  একটা কথা তাদের (সরকার) বলতে চাই, গলাবাজি না করে রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হচ্ছেন—এই কারণে পদত্যাগ করে দয়া করে নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে, নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করে জনগণকে রেহাই দেন, জনগণকে স্বস্তি দেন।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গোটা দেশে এখন একটাই মাত্র আলোচনা— সেটা হচ্ছে ক্যাসিনো-জুয়া। সারা দেশে বলা হচ্ছে কারণ, ঢাকার বাইরেও এই জুয়া চলছে। এই সরকারের আমলে এটা প্রচণ্ড রকমে বেড়ে গেছে। বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণটা হচ্ছে তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই কোথাও।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এখন ২৯ ডিসেম্বর যাদেরকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করেছে তাদেরকে বলা কিছু নেই, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণই করতে পারছে না। যে কারণে এই পরিস্থিতিগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। না পারছে নিজের দল, না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, না অন্য কিছু—সব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এই সরকারের কোনও বৈধ অধিকার নেই ক্ষমতায় টিকে থাকার। তারা সচেতনভাবে এটাকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, ব্যর্থ রাষ্ট্রের কারণেই কিন্তু সমস্ত অরগানগুলো ফেইল করে যাচ্ছে, ভেঙে পড়ছে, কাজ করছে না।’

তিনি বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে জোটের অন্যতম শরিক রাশেদ খান মেনন বলেছেন যে, দুর্নীতি এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। অর্থাৎ দুর্নীতি এখন একেবারে ওপর থেকে শুরু করে নিচে পর্যন্ত ছড়িয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, ওই চকিদার পর্যন্ত দুর্নীতি হচ্ছে একেবারে ফ্রি— যা খুশি করতে পারো, কেউ কিছু দেখবে না, দেখার কেউ নেই। দেয়ার ইজ নো অ্যাকাউন্টেবেলিটি, কোথাও কোনও জবাবদিহিতা নেই।”

বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, আমাদের তো বলার দরকার হয় না। যেখানে একটা পর্দার দাম ৩০ লাখ টাকা, একটা বালিশের দাম ৭ হাজার টাকা, একটা বইয়ের দাম ৮৫ হাজার টাকা …। এভাবে দেখেন গণমাধ্যমে যে তালিকা এসছে কীভাবে ভয়াবহ দুর্নীতি চলছে। মেগা প্রজেক্টে দুর্নীতি, ৮ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু  প্রজেক্ট ৩০ হাজার কোটি টাকা পার হয়ে গেছে, মেট্রো রেল, এক্সেপ্রেস রেল –সবগুলো প্রজেক্টে দুর্নীতি ছাড়া আর কিছু নেই। চতুর্দিকে দেখবে শুধু দুর্নীতি দুর্নীতি আর দুর্নীতি। এই অবস্থায় একটা রাষ্ট্র কোনোমতেই চলতে পারে না।”

‘তারেক রহমানকে অভিনন্দন’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ ছাত্রদলের কাউন্সিল অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানানো হয়েছে।  তার নেতৃত্বে ও ব্যাপক প্রচেষ্টায় এটা সফল হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।”

তিনি বলেন, ‘একইসঙ্গে আমরা মির্জা আব্বাস সাহেবকেও ধন্যবাদ জানিয়েছি যে তার বাসায় এই কাউন্সিলটা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।”

দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর টকশোতে দেওয়া একটি বক্তব্যের কারণে তার গ্রামের বাড়িতে হামলার ঘটনার নিন্দা জানান মির্জা ফখরুল। এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকালে স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক হয়। বৈঠকে রংপুর-৩ উপ-নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে সিলেট, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচির বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল ম্ঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।