রাজনীতি থেকে দুর্বৃত্তায়ন দূর করতে কাজ করছে আ. লীগ: ড. হাছান মাহমুদ

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদতথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, তার দল রাজনীতি থেকে দুর্বৃত্তায়ন ও বণিকায়ন দূর করতে কাজ করছে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজনীতিতে যে অপচর্চা শুরু হয়েছিল, তা থেকে বের করে রাজনীতিকে গুণগত পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেতে চায়। এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে সেই লক্ষ্যের দিকে আওয়ামী লীগ আরও বেশি এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা এমনিতেই স্বচ্ছ। তারা জনকল্যাণমূলক কাজ ও ইতিবাচক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু ভালোর মধ্যেও প্রতিযোগিতা থাকে। এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে ভালোদের মধ্য থেকে ভালোদের বেছে নিয়ে দলের সভাপতি একটি সুশৃঙ্খল, শক্তিশালী ও গতিশীল দল গঠন করবেন। যে কমিটি দেশের সমৃদ্ধির পথের অভিযাত্রাকে আরও বেগবান করবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুদ্ধি অভিযানের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ তার ফসল ঘরে তুলবে। নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় নেতারাই নেতৃত্বে আসবেন।’

ড. হাছান মাহমুদ বর্তমানে সরকারের তথ্যমন্ত্রী। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গুনিয়া থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রথমে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, এর ছয় মাস পর পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে সাড়ে চার বছর সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হন। এক মেয়াদ বিরতি দিয়ে তিনি এবারের সরকারে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।

দল ও সরকারকে আলাদা করার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক বলেন, ‘দলীয় ফোরামে এমন আলোচনা হয়নি। দলের ভেতর থেকেই সরকার গঠন হয়। সরকার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক করে দলের ঘোষণাপত্র এবং নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকেই। কাজেই এখানে এক ধরনের সমন্বয়ের বিষয় রয়েছে। অতীতেও এমন আলোচনা হয়েছে যে, দল ও সরকার আলাদা করা হবে। কিন্তু সরকারকে সব কাজ দলই করাচ্ছে। যারা সরকারে আছেন তারা দলের সঙ্গেই সম্পৃক্ত। সরকারের জবাবদিহিও অনেকাংশে দলের কাছেই। আর এ বিষয়টি নির্ধারণ করে থাকেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। কাজেই দল ও সরকারকে কতটুকু পৃথক করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন। সম্মেলনের পর বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অভিজ্ঞ ও তরুণদের নিয়ে এবারও কমিটি হবে। তরুণদের প্রাধান্য দেওয়ার যে বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে, সেটা আওয়ামী লীগ আগে থেকেই করে আসছে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশাপাশি প্রতিটি কমিটিতেই তরুণরা নেতৃত্ব পেয়েছেন। এছাড়া, দলের বিষয়ভিত্তিক উপ-কমিটিগুলোতে অধিক হারে তরুণরা কাজ করে থাকেন। আওয়ামী লীগে বিষয়ভিত্তিক উপ-কমিটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এসব কমিটিতে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ হয়। দেশের সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়। উপ-কমিটিগুলো আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নিয়ে সুপারিশ করেন। এর আলোকে কৌশল নির্ধারণ এবং পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়। কাজেই একটা বিষয় স্পষ্ট যে, তরুণরা বরাবরই গুরুত্ব পেয়ে আসছেন। তবে, এবার কী হারে এবং কত সংখ্যক তরুণ কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতৃত্ব পাবেন, তা সম্মেলনের পর নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমেই নিশ্চিত করে বলা যাবে।’

ড. হাছান মাহমুদ দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একজন খ্যাতিমান পরিবেশবিদ হিসেবে সুপরিচিত। প্রথমে তিনি আওয়ামী লীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও দলের অন্যতম মুখপাত্রের দায়িত্ব পান।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতা বলেন, ‘দলে নারী নেতৃত্বের সংখ্যা বৃদ্ধির হার এবারও অব্যাহত থাকবে। গত সম্মেলনের থেকে বেশি সংখ্যায় নারী কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসবেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে দ্রুতই ৩৩ শতাংশ কোটা পূরণ হবে।’ সার্বিকভাবে এবারের সম্মেলন সুন্দর-সুশৃঙ্খল এবং সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ড. হাছান মাহমুদ।