মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজের বেইলি রোডের বাসাতেই ছিলেন কামাল হোসেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘কালকে (বুধবার) বোঝা যাবে প্রতিক্রিয়া কী।’
পরিস্থিতি ‘নরমাইলাইজডের’ ব্যাখ্যা জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ করোনাভাইরাসের মুখোমুখি। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে আমরা জানিয়েছি সরকারকে এটা মোকাবিলা করতে হবে। করোনায় আমি নিজে অফিসে যেতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এটাকে মনিটর করতে হবে, যেখানে ঘাটতি হচ্ছে দৃষ্টি আকর্ষণ করা। অন্য যে সাজেশন্সগুলো আসবে সেগুলোকে সাপোর্ট করা। অনেকের সঙ্গে কথা বলবো।’
কামাল হোসেনকে অনেকবারই খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কথা বলতে হয়েছে। কখনও কখনও বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যফ্রন্টের ঘরোয়া সমাবেশে তাকে বিষয়টি উল্লেখ করে চাপও দিয়েছেন বলে জানান গণফোরামের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
গত বছরের ২০ অক্টোবর ফ্রন্টের সভায় কামাল হোসেনসহ নেতারা কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে দেখতে বিএসএমএমইউতে যাবেন, এমন সিদ্ধান্ত হলেও পরে দফায় দফায় এ সিদ্ধান্ত পাল্টেছে ফ্রন্ট। অনেকের অভিযোগ, বিএনপির অনীহাতেই ওই সাক্ষাৎ ঘটেনি। এ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিবেদন ছিল- খালেদা জিয়া-ড. কামাল সাক্ষাৎ অনিশ্চিত ।
দলটির প্রভাবশালী এক নেতার ভাষ্য— কামাল হোসেনের পক্ষ থেকে আদালতে যেতে কয়েকবারই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমনকি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছেন আ স ম রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে। কিন্তু বিএনপির আইনজীবীরা গা করেনি। যদিও এ বিষয়টি নিয়ে গণফোরামের কোনও নেতাই মুখ খুলতে নারাজ। তবে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বিভিন্ন সময় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে একাধিকবার এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম সংগঠক আ স ম রব বলেছেন, দীর্ঘদিন পর সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। খালেদা জিয়ার মুক্তির মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসের এই বিশেষ মুহূর্তে সারাদেশের মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ত্বরান্বিত হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগারে পাঠানো হয় খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের ১ এপ্রিল তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গঠিত বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড কারাগারে গিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। এরপর ৭ এপ্রিল বেলা ১১টা ২০ মিনিটে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের করে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়। ওইদিন কেবিন ব্লকের ৫১২ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন খালেদা জিয়া। সেদিনই তাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় কারাগারে। এরপর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করতে ও চিকিৎসা সেবা শুরু করতে পাঁচ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুই দিন পর ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর বিকাল পৌনে চারটার দিকে তাকে বিএসএমএমইউতে আনা হয়। চূড়ান্তভাবে ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করানো হয় তাকে। সেদিন থেকে তিনি বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।