X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা জিয়া-ড. কামাল সাক্ষাৎ অনিশ্চিত

সালমান তারেক শাকিল
২৭ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:১৫আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০১৯, ০৮:১৩

খালেদা জিয়া ও ড. কামাল হোসেন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও মত পাল্টে ফেলেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। ৭ দিন আগে (২০ অক্টোবর) সংবাদকর্মীদের সামনে ‘সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে যাবেন ফ্রন্টের নেতারা’, আ স ম রব আড়ম্বরে এমন কথা বললেও রবিবার (২৭ অক্টোবর) বিকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও অগ্রগতি আসেনি ঐক্যফ্রন্টে। তবে কামাল হোসেন না গেলেও বাকি কয়েকজন শীর্ষ-নেতা বিএনপির চেয়ারপারসনকে দেখতে যাবেন বলে আশাবাদী গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া।

রেজা কিবরিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা জাস্ট কয়েকদিন অপেক্ষা করছি। বিএনপির চেয়ারপারসনের পরিবার সাক্ষাৎ করে এসেছেন। কারাবিধি অনুযায়ী সময় পেলেই আমরা যাবো।’

কামাল হোসেন যাবেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘স্যারের একটা প্রবলেম দেখা দিয়েছে, আমরা দেখছি কতদিন লাগে। তার বাম হাঁটুতে সমস্যা আছে, ব্যাংককে বা সিঙ্গাপুরে এটার চিকিৎসা করিয়ে নেবো।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চারটি শরিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০ অক্টোবর ফ্রন্টের সভায় কামাল হোসেনসহ নেতারা খালেদা জিয়াকে দেখে এসে দেশবাসীকে তার বর্তমান অবস্থা জানাবেন, এমন প্রস্তাব তুলেছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ওই প্রস্তাবের কথা ফোনে জানানো হয় ওইসময়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও। তিনিও সম্মতি দেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে বিষয়টি গণমাধ্যমে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয় সেদিন। কিন্তু এর দুদিন পার হতেই ২২ অক্টোবর মত পাল্টান ড. কামাল হোসেন। জানানো হয়, তিনি অসুস্থ।

জানতে চাইলে জাফরুল্লাহ চৌধুরী আজ রবিবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কামাল হোসেনের শরীর খুব খারাপ, তিনি যাবেন না।’

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, গত ২৩ অক্টোবর কামাল হোসেন অসুস্থ হওয়ার খবরটি পাওয়ার পর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গিয়েছিলেন তাকে দেখতে। সূত্রের দাবি, মূলত সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করাই ছিলো টুকুর লক্ষ্য। যদিও কামাল হোসেন তাতে রাজি হননি।

ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা বলছেন, ২০ অক্টোবরের বৈঠকে যখন বিষয়টি উত্থাপিত হয়, তখন কামাল হোসেন রাজি হন। পরে ঠিক কেন মত পাল্টালেন তার পরিষ্কার কোনও ব্যাখ্যা এখনও তারা পাননি।

ফ্রন্টের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ, চলতি মাসের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে করা বাংলাদেশের চুক্তিগুলোর বিষয়ে কামাল হোসেন মৌনতা অবলম্বন করেন। ফ্রন্টের আগের বৈঠকে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বিষয়টি তুলে বলেছিলেন যে ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তির বিষয়ে দলে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরতে হবে। ওই আহ্বানও কানে তুলেননি কামাল হোসেন।

ফ্রন্টের প্রভাবশালী তিন নেতার ভাষ্য, হতে পারে শেষ বয়সে রাজনৈতিকভাবে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার আশঙ্কায় কামাল হোসেন বিএনপির চেয়ারপারসনকে সশরীরে দেখতে রাজি হচ্ছেন না। বিশেষ করে সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে বিষয়টি সহজভাবে নাও গ্রহণ করা হতে পারে। একইসঙ্গে প্রভাবশালী একাধিক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্ভাব্য মনোভাবও তাকে উদ্বিগ্ন করে থাকতে পারে। সে কারণেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ থেকে দূরে থাকতে চাইছেন কামাল হোসেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ব্যাখ্যা অবশ্য ভিন্ন। তার মত, খালেদা জিয়া গ্রেফতার হয়েছেন দেড় বছরের বেশি সময় হয়েছে। কামাল হোসেন হয়তো ভাবছেন, কী জবাব দেবেন তার সামনে গিয়ে?

তিনি বলেন, ‘ইনফ্যাক্ট আমিও ভাবছি, আমি যখন গত বছরের ফেব্রুয়ারির মাসের এক তারিখ দেখা করেছিলাম, তখন ম্যাডামকে বলেছিলাম আপনাকে ম্যাক্সিমাম একমাস থাকতে হবে, মুক্ত হয়ে যাবেন। কিন্তু কী ঘটলো, কী জবাব দেবো আমরা?’

গণফোরামের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ফ্রন্ট নেতাদের কেউ-কেউ অসুস্থ কামাল হোসেনকে প্রয়োজনে হুইল চেয়ারে করে হলেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করাতে আগ্রহী। যদিও গণফোরামের নীতিনির্ধারকরা বলে দিয়েছেন, কামাল হোসেন হুইল চেয়ারে করে খালেদা জিয়াকে দেখতে গেলে তা ‘রাজনৈতিক কৌশলগত ভুল’ হিসেবে পর্যবসিত হতে পারে।
ফ্রন্টের শরিক জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলছিলেন, ‘কামাল সাহেব যাবেন না, তার হয়তো দেশের বাইরে কোনও প্রোগ্রাম থাকতে পারে। ওটা ঠিক থাকলে তিনি যাবেন না। ফলে, তার বিকল্প কাউকে দেওয়া হতে পারে।’
রবিবার (২৭ অক্টোবর) বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে খোঁজ নেওয়া হয় কামাল হোসেনের বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে। তার একাধিক সহকারী জানান, তিনি শারীরিকভাবে আগের তুলনায় সুস্থ। তার অফিসিয়াল কাজে যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, রবিবার সকাল ১০টার দিকে তিনি যথারীতি মতিঝিলের ল’ চেম্বারে যান এবং সেখানে কয়েকটি মিটিংয়েও অংশগ্রহণ করেন।

ঐক্যফ্রন্টের দফতরের সূত্রে জানা গেছে, কামাল হোসেন অসুস্থ জানানোর পর ফ্রন্টের আরেক নেতা আ স ম রব তার স্ত্রী তানিয়া রবের নাম সংযুক্ত করে পাঁচজনের একটি তালিকা কারা অধিদফতরে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন। যদিও সেই তালিকা জমা দেওয়া হয়নি।

বিএনপির সূত্র জানায়, কামাল হোসেনের অনীহা জানার পর ফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে আলোচনা হয় মির্জা ফখরুল দেশে ফিরলে তার সমন্বয়েই বিষয়টি সমাধান করার। বিএনপি সূত্রের খবর, ২৪ অক্টোবর দলের মহাসচিব দেশে ফেরার পর এ বিষয়ে কোনও আলোচনা এখনও হয়নি।

ঐক্যফ্রন্টের প্রভাবশালী দুই নেতার ভাষ্য, কামাল হোসেন না গেলেও ফ্রন্টের বাকি নেতাদের সমন্বয় করে নিয়ে যাওয়ার কাজটি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের করার কথা। কিন্তু, তিনি দেশে ফেরার পর চারদিন পার হলেও এ নিয়ে কোনও আলোচনা বা বৈঠক হয়নি। গত শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) এ প্রতিবেদককে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘এখনও কিছু বলতে পারছি না। আমি তো মাত্র ফিরেছি। আজকে একটু ব্যস্ত ছিলাম। কাল (শনিবার) খবর নেবো।’

মির্জা ফখরুলের ঘনিষ্ঠ একজন জানান, আজ রবিবার রাতে ঠাকুরগাঁও যাবেন বিএনপির মহাসচিব। সেখানে কৃষক দলের একটি সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি।

জানতে চাইলে ফ্রন্টের অন্যতম নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের যাওয়ার বিষয়টি ছিল, আমরা এই মেসেজটা দিতে চাই যে আমরা ঐক্যবদ্ধ। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আমাদের মধ্যে কোনও দ্বিধা সংশয় নেই। যে কোনও কারণেই হোক এখনও পর্যন্ত এই বার্তা গেলো না, এতে কিছুটা হলেও আন্দোলনের জন্য ক্ষতি হলো।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একজন নেতা বলেন, আ স ম রব ২০ অক্টোবর সাংবাদিকদের বলেছেন, কামাল হোসেনসহ নেতারা যাবেন খালেদা জিয়াকে দেখতে। এরপর ২১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী করে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ইঙ্গিত ছাড়া দেখা করার অনুমতি দেবেন? ওই বৈঠকেও তিনি ব্যক্তিগত কিছু বিষয় তুলেন। তার সঙ্গে থাকা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জাফরুল্লাহ চৌধুরীও ইস্যুর বাইরের কিছু বিষয়ে কথা বলেন। ওই ব্যাপারগুলো ফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে সমালোচনা সৃষ্টি করে।

জানতে চাইলে রেজা কিবরিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ না, না, রব ভাই যা বলেছেন, তা আমাদের সেন্টিমেন্টের মধ্যে থেকেই আলোচনা করেছেন। তিনি আমাদের সিনিয়র নেতা। তার স্পিচে কোনও ভুল নেই।’

রবিবার বিকালে পুরো পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে। কুশল বিনিময়ে তিনি জানান, মোটামুটি ভালো আছেন।

বিএনপির চেয়ারপারসনকে দেখতে যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ আমার তো জানা নেই, এমন কোনও কথা ছিল কিনা। একদমই জানি না।’

চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটা, উত্তরে কামাল হোসেন বলেন, ‘খুব বেশি যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’

খালেদা জিয়াকে দেখতে তাহলে অন্যরা যাবেন, এমন প্রসঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে ৮৩ বছর বয়স্ক এ নেতা বলেন, ‘সেটাও আমি জানি না। পার্টির বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কিছু করতে পারছি না, এসব বিষয়ে রেজা কিবরিয়াই ভালো জানবেন।’

উল্লেখ্য, গত ২৫ অক্টোবর খালেদা জিয়ার মেঝবোনসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য তাকে দেখতে যান বিএসএমএমইউতে। তারা দেশের বাইরে নিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করাতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আজ রবিবার মির্জা ফখরুল যুবদলের একটি অনুষ্ঠানে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থ অবস্থায় ফিরে না আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

আরও পড়ুন:

খালেদা জিয়ার সুস্থ অবস্থায় না ফেরার আশঙ্কা ফখরুলের 

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সম্মতি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: রব

খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন ড. কামাল হোসেন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে ড. কামালসহ ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সাক্ষাৎ কতদূর?

 

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’