করোনায় পহেলা বৈশাখ: সোনালী সম্ভাবনার প্রত্যাশা রাজনীতিকদের

৪৪

করোনাভাইরাসের কারণে বাংলা নববর্ষের দিনে বিনা কারণে বাড়ির বাইরে না গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঘরে থেকে মৌসুমি ফল খেয়ে আনন্দ করতে জাতিকে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটিকে সামনে রেখে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও আশা করছেন, সামাজিক দূরত্ব মেনে ঘরে থেকেই বিশেষ এই সময়ে আসা পহেলা বৈশাখের উদযাপন হয়ে উঠুক পারস্পরিক শুভেচ্ছাময়। আর  করোনাভাইরাসের এই দুর্বিপাক কেটে গেলে সোনালী সম্ভাবনা আসবেই। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সোমবার (১৩ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে রাজনীতিকরা এসব আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিশেষ বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে নববর্ষের প্রথম প্রভাতে দলের অগণিত সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাকের মধ্য দিয়ে আমাদের পালন করতে হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। ফেলে আসা বছরের দুর্যোগ, দুর্বিপাক কাটিয়ে আমরা নতুন বছরে এগিয়ে যাওয়ার সোনালী সম্ভাবনা দেখতে পাবো বলে বিশ্বাস করি। বর্তমান দুঃসময়, মহামারি ও নৈরাজ্যের অভিঘাত সত্ত্বেও আমাদের শান্তি, স্বস্তি, সুস্থতা ও সহাবস্থান ফিরিয়ে আনতে হবে। বিচ্ছেদ ও বিভাজন দূর করে পহেলা বৈশাখ ভরে উঠুক পারস্পরিক শুভেচ্ছায়।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এবারের নববর্ষের উৎসবে আমরা বিমর্ষ ও বেদনার্ত। সারা দুনিয়াজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে জনজীবনে যে বিয়োগান্তক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা বর্ণনা করার ভাষা আমার জানা নেই। দেশে দেশে করোনার আক্রমণে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটছে, আক্রান্ত হচ্ছেন অগণিত মানুষ। তাই এবারের বাংলা নববর্ষের উৎসব ঐতিহ্যের ধারা বেয়ে পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আমাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। পহেলা বৈশাখেও সবাই যেন ঘরে ঘরে অবস্থান করেন। আমি দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা এই সংকটকালে অসহায় গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ান।’

এবারে  পহেলা বৈশাখকে একটু ভিন্নভাবে স্বাগত জানাতে সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘এমন একটি সময়ে আমাদের সামনে পহেলা বৈশাখ হাজির, যখন করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। মৃত্যু আতঙ্ক বিশ্বে প্রতিটি মানুষের অন্তরে। তাই, এই আতঙ্কময় কোভিড-১৯ এর কবল থেকে বাঁচতে প্রত্যেকে নিজ ঘরে থেকেই মহান স্রষ্টার অনুগ্রহ প্রার্থনা করুন। ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। এই দুর্যোগ কেটে গেলে আমরা আবারও মিলবো প্রাণের উৎসবে।’ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এক ভিডিওবার্তায় জিএম কাদের দেশের মানুষকে বাংলা নতুন বছরের শুভেচ্ছা, ভালোবাসা ও অভিনন্দন জানান।

ভিডিওবার্তায় জিএম কাদের দাবি করেন, তার ভাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ‘পহেলা বৈশাখকে বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত করতে’ দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘এরপর থেকে বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ মানেই রঙিন উৎসবে বাঙালির প্রাণের সঞ্চার।’ এই মহালগ্নে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছেন তিনি।

 ‘সব গ্লানি ও ব্যর্থতা নিয়ে বিদায় হোক ১৪২৬, আর বাংলা নববর্ষ ১৪২৭ হোক করোনামুক্ত জাতীয় ঐক্যের বাংলাদেশ’ এই প্রত্যাশা করে দেশবাসী ও বিশ্বের সব বাঙালিদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূইয়া। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিশেষ বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘প্রার্থনা অতীতের সব গ্লানি, ব্যর্থতা ও অনৈক্য মুছে ফেলে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা করোনা, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি ও বিপর্যয় মোকাবিলা করতে যেন সক্ষম হই।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। তারা এই কঠিন পরিস্থিতিতে সবাইকে নিজ নিজ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঘরে পহেলা বৈশাখ পালনের আহ্বান জানান। নেতারা বলেন, ‘চলমান করোনা পরিস্থিতি প্রকৃতির ঋতু-বৈচিত্র্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা কতোটা জরুরি— তা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে।’

এবারের বাংলা নববর্ষের উৎসবে সমগ্র জাতি বিমর্ষ বলে মনে করে এলডিপি (একাংশ)। দলটির সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। 

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণত যেসব অনুষ্ঠান বা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় পহেলা বৈশাখে, তা এবার হচ্ছে না। করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে। বিভিন্ন দলের নেতারা বলছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এখন সবচেয়ে বড় সংগ্রাম সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, দলীয়ভাবে পহেলা বৈশাখ নিয়ে কোনও প্রোগ্রাম নেই। সঙ্গত কারণেই এবারের বৈশাখে ঘরে থেকে স্বজনদের সঙ্গে পালন করতে হবে।

ছবি: ফয়সল রাজীব