৩৫ সদস্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না আ.লীগের উপকমিটি

আওয়ামী লীগবেঁধে দেওয়া সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না আওয়ামী লীগের উপ-কমিটিগুলোর সদস্য। প্রতিটি উপ-কমিটিতে সদস্য ৩৫ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশনা থাকলেও এই সংখ্যা আরও বাড়ছে। কোনও কোনও উপ-কমিটির সংখ্যা নির্ধারিত আকারের চেয়ে বেড়ে দ্বিগুণে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। দল ও সহযোগী সংগঠনে পদপদবি বঞ্চিতদের জায়গা করে দিতে এমনটি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রায় সব উপ-কমিটির সদস্যদের নাম প্রস্তাব করে তালিকা হাইকমান্ডে জমা পড়েছে। এসব কমিটির অধিকাংশ সদস্য হিসেবে ৬০ থেকে ৮০ জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথমদিকে জমা পড়া উপ-কমিটির সদস্য ৩০ থেকে ৩৫ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে নাম প্রস্তাব করে জমা দেওয়া হয়। তবে পরে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে নতুন করে জমা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি একই সময়ে ঘোষণার কথা থাকলেও উপ-কমিটিগুলোর নাম ঘোষণায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। সদস্য সংখ্যা বাড়ানো ও ‘রিজেন্ট সাহেদের’ মতো বিতর্কিতদের অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে তার জন্য উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে প্রস্তাবিতদের সব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। তবে উপ-কমিটি এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানা গেছে। শিগগিরই তা ঘোষণা হতে পারে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উপ-কমিটির নাম ঘোষণা নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সময় প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য সংখ্যা নিয়েও কথা হয়। দলীয় সভাপতি উপ-কমিটির সদস্য বেশি হয়েছে বলে মন্তব্য করলেও তা কমানোর কোনও অনুশাসন দেননি।
অবশ্য সদস্য সংখ্যা ৩৫ জনের মধ্যে রাখা নিয়েও আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। সদস্য সংখ্যা কম রাখার পক্ষধারীদের যুক্তি হলো, বেশি সংখ্যক সদস্য রাখতে গিয়ে অনেক বিতর্কিত নেতারা কমিটিতে ঢুকে পড়েন। ফলে দলকে বদনামের ভাগীদার হতে হয়। আর কমিটিতে ৩৫-এর বেশি সদস্য রাখার পক্ষের নেতারা বলছেন, সদস্য সংখ্যা বেশি হলে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের যারা পদবঞ্চিত হয়েছেন তাদের জন্যে একটি জায়গা তৈরি হবে। এতে দলের জন্য নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে।
এছাড়া সরকারের মেয়াদ দুই বছর পার হতে চলেছে। কিছু দিন পরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল বাজতে শুরু করবে। ফলে পদপদবি দেওয়ার মাধ্যমে তাদের দলীয় কার্যক্রমে সক্রিয় রাখতে পদ বাড়ানোর চিন্তা এসেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের উপ-কমিটিগুলোর কাজের পরিধি অনেক। স্বল্প সংখ্যক সদস্য দিয়ে সব কাজ ভালোভাবে করা সম্ভব নয়। যার কারণে ৩৫ জনের চেয়ে বেশি নাম আমরা প্রস্তাব করেছি।’
এই সংখ্যা কত হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ৭০ থেকে ৭৫ জনের নাম প্রস্তাব করেছি। তবে কতজনের অনুমোদন হবে সেটা সুপ্রিম অথরিটির বিষয়। তিনি যেটা করবেন সেটাই হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে উপ-কমিটি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে আছে। যেকোনও সময়েই নাম ঘোষণা হতে পারে।’
সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কয়েকজন সম্পাদক অনুরোধ করেছিলেন সদস্য বাড়ানোর। এ বিষয়টি বিবেচনা করে সদস্য সংখ্য কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে। এতে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রীরও সম্মতি দিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমে যাওয়ায় সেপ্টেম্বরের শুরুতে সীমিত পরিসরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। সেপ্টেম্বরের শুরুতে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উপ-কমিটির সদস্যদের নামের প্রস্তাব করার নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে তিনি উপ-কমিটির সদস্য ৩৫ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশও দেন।
আওয়ামী লীগের গঠতন্ত্রের ২৫-এর ৬ উপধারায় সম্পাদকীয় বিভাগের কার্যক্রম অধিকতর গতিশীল করতে প্রতিটি সম্পাদকীয় বিভাগে একটি করে উপ-কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকদের সদস্য সচিব এবং দলের একজন উপদেষ্টাকে চেয়ারম্যান করে এই উপ-কমিটি গঠন করা হয়। সংশ্লিষ্ট সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যরা পদাধিকার বলে উপ-কমিটির সদস্য হবেন। উপ-কমিটির সদস্য সংখ্যা কত হবে তা গঠনতন্ত্রে উল্লেখ নেই। এ কারণে বিগত সময়ে উপ-কমিটির সদস্য ৭০ থেকে ১০০ জনের মধ্যেও রাখতে দেখা গেছে।