‘মির্জা আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার’

বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাসের বক্তব্যে তাদের দলীয় নেতা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের ঘটনা তদন্তে পথ দেখিয়েছে বলে মনে করেন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। ক্ষমতাসীন জোটের এই নেতারা ঘটনার তদন্তে মির্জা আব্বাসকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি করেন। রবিবার (১৮ এপ্রিল) বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় ১৪ দলের নেতারা এ দাবি করেন।

শনিবার ঢাকাস্থ সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী সংহতি সম্মিলনীর উদ্যোগে বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবিতে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ইলিয়াস গুমের পেছনে, আমি রিপিট করছি, ইলিয়াস গুমের পেছনে আমার দলের লুটপাটকারী, বদমাইশগুলো আছে, তাদের দয়া করে আইডেন্টিফাই করার ব্যবস্থা করেন, প্লিজ। এদেরকে অনেকেই চেনেন।’

সেখানে বিএনপি নেতা আব্বাস আরও বলেন, ‘যারা আজকে ইলিয়াসকে গুম করেছে, আমি জানি, আওয়ামী লীগ সরকার গুম করে নাই। কিন্তু গুমটা করলো কে? এই সরকারের কাছে আমি জানতে চাই। এই সরকারের কাছে আমি এটা জানতে চাই।’

অবশ্য রবিবার দুপুরে রাজধানীর শাহজাহানপুরে জরুরী সংবাদ সম্মেলন ডেকে মির্জা আব্বাস ওই বক্তব্য অস্বীকার করেন। ‘আমার সহজ-সরল উক্তিগুলোকে বিকৃত করা হয়েছে’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমার আংশিক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। ইচ্ছামতো আমার বক্তব্যকে ব্যবহার করা হয়েছে। কি কারণে করা হয়েছে আমি জানি না। এমন কোনও কথা বলি নাই, যার জন্য আমাকে বিব্রত হতে হবে।’

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সরকার তো শুরু থেকেই ইলিয়াস আলীর গুমের বিষয়ে বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ নিয়ে বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাস যে কথা বলেছেন সরকার তা তদন্ত করে দেখতে পারে। আসলে বিষয়টি কী সেটা দেখতে পারে।

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বিষয়টি তদন্তাধীন উল্লেখ করে কোন মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ওই ঘটনাটি তদন্তের মধ্যে রয়েছে। ফৌজদারি মামলার বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম রবিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বিএনপির মিথ্যাচারের থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বারবার মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে—সরকার ইলিয়াস আলীকে নিখোঁজ করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের কথায় সত্য উন্মোচিত হয়েছে।’

মির্জা আব্বাসের শনিবারের বক্তব্যের বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, মির্জা আব্বাসের বক্তব্যে ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের রহস্য জানার সুযোগ হয়েছে। ওই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধানের পেছনে বিএনপির লোকজন জড়িত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত হবে এখন মির্জা আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা।

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, সত্য যে লুকিয়ে রাখা যায় না মির্জা আব্বাসের বক্তব্যে তার প্রমাণ হয়েছে। বিএনপি নিজেরা হত্যা, গুম, খুনে জড়িত তারা নিজেরাই নিজেদের নেতাকর্মীদের গুম ও হত্যা করে মির্জা আব্বাস তা পরিষ্কার করেছেন।

তিনি বলেন, আমার মনে হয়েছে ইলিয়াস আলীর গুমের বিষয়ে মির্জা আব্বাস জানেন। সরকারের উচিত হবে তাকে ‍পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো দ্রুত তাকে হেফাজতে নিয়ে ঘটনার সত্যতা খুঁজে বের করার।

বক্তব্য ‘ভুলভাবে‘ উপস্থাপনে গণমাধ্যমের ওপর দায় চাপানোর প্রশ্নে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান বলেন, আমরা নিজেরাই তার বক্তব্যের ভিডিও দেখেছি। সকল টেলিভিশনে এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে। এটা এখন অস্বীকার করে কোনও লাভ নেই।