মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ: বাসদ

দেশের মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠান চরম অবহেলা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।

বুধবার (১২ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাসদ ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

সমাবেশে নেতারা বলেন, ২০০০ সালে দেশে প্রথম ডেঙ্গু রোগী ঢাকায় শনাক্ত হলেও বর্তমানে তা দেশের ৫৯টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৮ সালে আক্রান্ত রোগীদের শতভাগই ছিল ঢাকায় কিন্তু বর্তমানে আক্রান্ত রোগীর প্রায় ৫০ ভাগই ঢাকার বাইরের জেলায়। ডেঙ্গু রোগী নিয়ন্ত্রণে ২০২১-২২ অর্থবছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ১০২ কোটি টাকা এবং ২২-২৩ অর্থবছরে ৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও তার কোনও প্রভাব ডেঙ্গুর ওপর পড়ে নাই।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতায় নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত যেখানে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ছিল ১ হাজার ৮৯ জন, মৃত্যু ১ জন। সেখানে ২০২৩ সালে একই সময়ে রোগী প্রায় ৮ হাজার ও মৃত্যু ৪৭ জন এবং জুলাই মাসের শুরুতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬ হাজার ৯১৯ জন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি ও প্রায় শতাধিক মারা গেছে। তাহলে প্রশ্ন সরকার ও সিটি করপোরেশন কী করছে? তারা কী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করছে না ডেঙ্গু বিস্তারে কাজ করছে।

বক্তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দেশের কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠান চরম অবহেলা ও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এতে জনগণ হুমকির মুখে পড়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ও অবকাঠামো খাতে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে, যার বেশিরভাগ সমাপ্ত, কিন্তু এই হাজার হাজার কোটি টাকা খরচের সুফল কি দেশের মানুষ পেলো?

তারা বলেন, গত জুন মাসেই দক্ষিণ আফ্রিকা ভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনকারী প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করেছিল। কিন্তু সরকার তাতে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তাদের অবহেলার ও উদাসীনতার চরম খেসারত হলো দেশের কোটি কোটি মানুষের তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়া। এখন এই তথ্য ফাঁসের ফলে দেশের কোটি কোটি মানুষ নানা হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।

এ সময় তারা অবিলম্বে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকার ও সিটি করপোরেশনের প্রতি আহ্বান জানান এবং ব্যর্থতার দায়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন। একই সঙ্গে দেশের নাগরিকদের তথ্য ফাঁসের ঘটনায় দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, তথ্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বাসদ ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় শীর্ষনেতা বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন নিখিল দাস, জুলফিকার আলী, আহসান হাবীব বুলবুল ও খালেকুজ্জামান লিপন।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে তোপখানা রোড, পল্টন, বিজয়নগর, সেগুনবাগিচা এলাকা প্রদক্ষিণ করে।