দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের এখনই শাস্তি দেবে না আ. লীগ

 

আওয়ামী লীগকুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যে সব নেতার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে, তাদের এখনই শাস্তি দেবে না কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে আপাতত কেন্দ্র থেকে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে অভিযুক্তদের হুঁশিয়ার করা হবে। বিশেষ করে তৃণমূল রাজনীতিতে যারা দলাদলি ও আধিপত্য বিস্তারে তৎপর,  কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে চিঠি পাঠিয়ে তাদের সতর্ক করা হবে। পাশাপাশি ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’—এমন সতর্কবার্তা দিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িতদের ‘আতঙ্কে’ রাখবে ক্ষমতাসীন দলটি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলোচনাকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেন, ‘নির্বাচন এলেই তৃণমূলের নেতাদের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনাসহ অভ্যন্তরীণ কলহে বার বার বেকায়দায় পড়তে হয় দলকে। তবু স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না আওয়ামী লীগ। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে গেলেই তৃণমূলের রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা বেড়ে যাবে। যা নির্বাচনে জয়ের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। 

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অভ্যন্তরীণ কলহ ও দলীয় অনৈক্য ফুটে উঠেছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখভাল করতে হয়েছে দু’টি নির্বাচনই। কেন্দ্রের দেখভাল করার পরও স্থানীয় কোন্দল মীমাংসায় হিমশিম খেতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। নারায়ণগঞ্জে জিতলেও কোন্দলের কারণে কুমিল্লা সিটিতে হারতে হয়েছে নৌকার প্রার্থীকে। এর পেছনে কুমিল্লার রাজনীতিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টি বেশি আলোচিত হয়েছে। স্থানীয় কয়েকটি ধারার রাজনীতি থাকায় সেখানে নৌকার ভোট বেশি থাকলেও আওয়ামী লীগ হেরেছে বলে মনে করছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও অভ্যন্তরীণ কলহের চিত্র ফুটে উঠেছে। অভ্যন্তরীণ কলহের কারণে অধিকাংশ পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে দলের অন্য নেতাকর্মীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা গেছে। আর এসব কারণে দলের প্রার্থীকে হারতে হয়েছে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেললেও জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের বিরুদ্ধে আর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। তবে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে শাস্তি দেওয়া হবে এ কথা বলে নির্বাচন পর্যন্ত সময়ক্ষেপণ করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শাস্তি দেওয়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি সংবলিত চিঠি দেওয়ার পর বিশৃঙ্খলাকারীদের ভেতরে আতঙ্ক বিরাজ করবে। তাই অভিযুক্তদের প্রতি সতর্কতাসহ কারণ দর্শানোর নোটিস ইস্যু করে মূলত আতঙ্কে রাখতে চায় দল।  

সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসলে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায় না আওয়ামী লীগ।’  ওই দুই নেতা বলেন, ‘ভোটের আগে এগুলো করা হলে তৃণমূলে আরও অস্থিরতা তৈরি হবে। শাস্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে গেলে পরস্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব, কোন্দল আরও বাড়বে। ফলে নির্বাচনে আরও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’

সম্পাদকমণ্ডলীর দুই নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়েছে অনেক এলাকায়। সর্বশেষ কুমিল্লায়ও কোন্দলে পরাজিত হয়েছে নৌকার প্রার্থী। তবু সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কঠিন।’ তারা বলেন, ‘শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গেলে বিশৃঙ্খলা বেশি তৈরি হবে। তাই আপাতত বিদ্রোহ করা, শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলের ভেতরে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তারও পর্যালোচনা চলছে। তিনি বলেন, প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকায় তড়িগড়ি করে কিছু করার সুযোগ নেই। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’

অন্য সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহও বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্তদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেটা দ্রুত হওয়ার সুযোগ নাই। নিয়ম অনুযায়ী হবে।’

/এমএনএইচ/