‘অস্বাভাবিক সরকার’ গড়তে চায় বিএনপি-জামায়াত: ১৪ দলীয় জোট

পাকিস্তানের সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক রেখে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে ‘অস্বাভাবিক সরকার গড়তে চায়’ বলে দাবি করেছেন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। তারা বলেছেন, যেসব রাজনৈতিক দল জামায়াত-বিএনপিসহ পাকিস্তানপন্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে রাজনৈতিক পার্টনারশিপ করে, তাদের বর্জন করতে হবে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিদায় দিতে হবে।

রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তারা।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপি আজকে ইস্যু নিয়েছে খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার। অথচ এই দুই বছরে তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে একটা পোস্টারও করেনি। এটা তাদের ইস্যু নয়। এটা তাদের মুরুব্বি দেশের ইশারা। দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ করতে তাদের এই হাঁকডাক।

“বিএনপি এতই আমোদ-প্রমোদ করছে যে আজ পর্যন্ত নিজেদের টাকায় বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করার উপলব্ধি তাদের নেই। তাকে বিদেশে নেওয়ার একটা বেআইনি প্রস্তাব নিয়ে তারা কথা বলছে। বিএনপি আসলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চায় না।”

কোনও ইস্যু জনগণ খাবে না, তাই বিএনপি-জামায়াত খালেদা জিয়ার বিদেশ ইস্যু নিয়ে মাঠ গরম করতে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা এখন বিশ্বদরবারে অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আজকে শেখ হাসিনার কথার ব্যাপারে অন্য দেশের রাজনৈতিক নেতারা চিন্তা করে কথা বলেন। আজকে যদি কেউ মনে করেন ঠুনকো প্রধানমন্ত্রী, ঠুনকো সরকার, ঠিক হবে না। এটা তারা প্রমাণ পেয়েছে এবং আরও প্রমাণ পাবে।’

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাদের চেহারা পরিবর্তন করেনি। এখনও পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। তারা জঙ্গিবাদ করে, অস্বাভাবিক সরকার করার পাঁয়তারা করছে। তারা রাষ্ট্রের ভিত্তির ওপর হামলার কথা বলে, চার মূলনীতি উড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার কথা বলে।

তিনি বলেন, “যেসব রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ জামায়াত-জঙ্গি-আল-বদর-রাজাকারের পাকিস্তানপন্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে রাজনৈতিক পার্টনারশিপ করে, তাদের বর্জন করতে হবে। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিদায় দিতে হবে। আমরা বিষফোঁড়া নিয়ে সামনে এগোতে গেলে বারবার হোঁচট খাবো। আমরা নির্বিঘ্নে সামনে এগিয়ে যেতে চাই, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। সুতরাং যে রাজনৈতিক দল সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদের সঙ্গী পাকিস্তানি রাষ্ট্রের সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক রাখবে তাদের নিষিদ্ধ করাই বাঞ্ছনীয়।

বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ে তুলতে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ ধারণ করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে বলে মত দেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজকে বাংলাদেশ আয়তনের দিক দিয়ে ৯২তম হলেও অনেক কিছু উৎপাদনে সামনের সারিতে। এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্বের কারণে। বাংলাদেশ আজ খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশ। যে দেশে খাদ্য ঘাটতি শুরু হয় পঞ্চাশের দশকের শুরুতে, যখন ৫ কোটি জনসংখ্যা ছিল। এখন ১৭ কোটি মানুষ, মাথাপিছু জমির পরিমাণও পৃথিবীর সবচেয়ে কম। কৃষি জমির পরিমাণ ২৫ শতাংশ কমেছে।

কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক শ্রমিক নেতা ডা. ওয়াজেদ খান বলেন, সমাজ থেকে বৈষম্য ও দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে দেশের মাটি থেকে উৎখাত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে।

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বাশার মাইজভাণ্ডারী বলেন, আজকে এই যে আমরা কথা বলছি, নেতা হয়েছি—বঙ্গবন্ধু না থাকলে কিছুই হতো না। ১৫ আগস্টে যারা জন্মদিন পালন করে এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর কিছু হতে পারে না। এরা স্বাধীনতাবিরোধী। বিএনপি যতই বলুক স্বাধীনতার সপক্ষের, আসলে বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী। যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে ধর্মের অপব্যাখ্যা করে, যারা রাজনীতি করে ফায়দা লুটতে চায়, তার বিপক্ষে দাঁড়াতে হবে। ওয়াজ মাহফিলের নামে যারা স্বাধীনতা ও সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে, এদের তা বন্ধ করতে হবে।

আলোচনা সভায় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ-বিএসডি) আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘জনবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

সভায় বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা কামরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি জেপি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা, গণআজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এসকে শিকদার, গণতন্ত্র পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।