বাজেট বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী: আওয়ামী লীগ

প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেটকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনের প্রত্যয়ে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ বলেছে, কোভিড উত্তর পরিস্থিতি এবং ইউরোপে চলমান যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর যে চাপ তৈরি করেছে তা বিবেচনায় প্রস্তাবিত বাজেটটি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী।

এই বাজেট সফলভাবে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সরকার উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আরেক ধাপ অতিক্রম করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে ক্ষমতাসীন দলটি।

শনিবার (১১ জুন) প্রস্তাবিত বাজেটের বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল, ঐক্যবদ্ধ, সাহসী, স্মার্টার ও আধুনিক আওয়ামী লীগ নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাবে।286110910_2346535622151130_8817906640054758440_n

শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দেড় দশকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে দাবি করে কাদের বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি মজবুত অর্থনৈতিক কাঠামো থাকার কারণে কোভিড-১৯ মহামারি ও ইউরোপে যুদ্ধ চলমান থাকা সত্ত্বেও আমাদের সরকার দুঃসাহসী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সমর্থ হয়েছে।

বিশ্ব বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্বের কল্যাণে বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য বাজেটে প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির চাপ দেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে সরকারের ব্যয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণেই এবারের বাজেটের প্রস্তাবনায় বাস্তবতার আলোকে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে সরকার গুরুত্বের সাথে কিছু চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বাইরেও বিশ্বব্যাপী নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে 'ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগী ১ কোটি পরিবারের ৫ কোটি সদস্য সরাসরি উপকৃত হবে। বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গণমানুষের কথা চিন্তা করেই প্রধানমন্ত্রী এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, গত ১৩ বছর ধরে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে এক সোনালি অধ্যায় অতিক্রম করে চলেছে। বাংলাদেশ আজ সঙ্কট মোকাবিলায় বিশ্বের যে কোনো দেশের কাছে এক অনুকরণীয় রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সকল সঙ্কটের একমাত্র পরিত্রাণ কর্তা, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনার নিখাদ দেশপ্রেম, জনগণের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, দৃঢ় মনোবল, সততা, নিষ্ঠা এবং সাহসী নেতৃত্বে যে কোনো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র- সঙ্কট মোকাবিলা করা সম্ভব।

সরকারি নির্দেশনার পরেও কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর ঠেকানো যাচ্ছে না, এছাড়াও কর্মকর্তারা সরকারি যানবাহন পারিবারিক কাজে ব্যবহার করছেন। এমন অপচয় রোধে বাজেটেও সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশে যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। কথায় কথায় চলে যাবে, যার ইচ্ছা সে বিদেশে চলে যাবে, এটা মন্ত্রী হোক বা কর্মকর্তা হোক কারো ব্যাপারে এটা আর উৎসাহিত করা হবে না। আর প্রধানমন্ত্রী নিজেইতো সামারি সই করেন, কিন্তু এখন আর সামারিতে সই করছেন না। কাজেই এ ব্যাপারে চিন্তার কোনো কারণ নেই।

বৈশ্বিক মন্দার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, করোনা পরবর্তী বিশ্ব ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের কী অবস্থা! মূল্যস্ফীতি যুক্তরাষ্ট্রের কোথায়? যুক্তরাজ্যের কোথায়? ৪১ বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্য সব থেকে বেশি মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করছে। তিন বেলার মধ্যে তারা একবেলা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। পাকিস্তানে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি মূল্যস্ফীতি। ভারতের মূল্যস্ফীতি কত? শ্রীলঙ্কায় ৬০ এর কাছাকাছি মূল্যস্ফীতি। রিজার্ভে এক পয়সাও নেই। এর মধ্যে বাংলাদেশ যেখানে আছে- একজন পারফেক্ট ক্রাইসিস ম্যানেজার শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছেন। তবে, আমাদেরকে কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে। কারণ আশেপাশে কেউ ভালো নেই, আমরা ভালো থাকবো কী করে। যতটা ভালো থাকা যায় সেই চেষ্টাই করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মনি, কার্যনির্বাহী সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এসএম কামাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্দি দাশ, সংস্কৃতি সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।