আ. লীগ ও বিএনপি এক হয় কীভাবে, প্রশ্ন শেখ হাসিনার

আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তুলনা চলে না উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেকে অনেক কথা বলেন। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তুলনা করেন। কেউ কেউ বলেন বড় দুই দল। যারা দুই বড় দল বলবেন, তারা ভুল করেন। আওয়ামী লীগ মানুষের সংগঠন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। আর বিএনপির সময়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের সৃষ্টি হয়। দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। তারা মানুষকে কিছু দেয়নি। মানুষের অর্থ লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে গেছে।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার ভাঙ্গার হাটের টিটি (তালিমপুর তেলিহাটি) উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও সরকারপ্রধান ঘোষণা দেন।

যারা বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তুলনা করতে চান তাদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩০০ সিটের মধ্যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট পেয়েছিল মাত্র ৩০টি সিট। আর বাকি সিট আওয়ামী লীগ জোট। তাহলে দুই দল এক পর্যায়ের হয় কীভাবে?

কোটালীপাড়ায় জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

তিনি বলেন, বিএনপির সময়ে দেশ ছিল জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতিকে চ্যাম্পিয়ন। তারা মানুষকে কিছু দেয়নি। মানুষের অর্থ লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে গেছে।  বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল যারা নিজেদের গঠনতন্ত্র মানে না। খালেদা জিয়া ‍ও তার ছেলে দুজনই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারা সেই দলের নেতা। যারা দলের নিয়ম আইন ও গঠনতন্ত্র মানে না সেই দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের সংগঠন। এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দল গড়ে উঠেছে। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয়। এদেশের মাটি মানুষের সংগঠন আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে।

কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়াবাসীকে উদ্দেশ করে সরকারপ্রধান বলেন, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়াবাসী সবসময় আমার পাশে থাকেন বলে আমি নিশ্চিন্ত মনে কাজ করতে পারি। সুসময়-দুঃসময়ে সব সময় আমি কাছে পাই। এটাই আমার সব থেকে বড় শক্তি।

তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও আমরা অর্থনীতির গতি অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। 

শেখ হাসিনা তার নির্বাচনি এলাকাসহ সারা দেশের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, এসব বিশেষ উপহার (উন্নয়ন প্রকল্প) আজ আপনাদের দিয়ে যাচ্ছি। এতগুলো ব্রিজ এর আগেও করেছি। কোটালীপাড়াবাসীর আগে শুধু পানি-খাল-বিল বাঁশের সাঁকো পার হতে হতো। আজ রাস্তঘাট, পুল, ব্রিজ, স্কুল কলেজ করে এই অঞ্চলের মানুষের সুবিধা করে দিয়েছি। একদিনে শত সড়ক উদ্বোধন করেছি। একদিনে শত সেতু ‍উদ্বোধন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরে কোটালীপাড়ায় জনতার ভিড় (ছবি: ফোকাস বাংলা)

পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অপবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতির অপবাদ চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। কারণ দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি। তাই কোনও মিথ্যা অপবাদ নিতে আমি রাজি নই। বিশ্বব্যাংক অপবাদ দিতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ আত্মমর্যাদা নিয়েই চলে। আমাদের কেউ অপবাদ দিলে আমরা তা মানবো না। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি বলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে সবাই সতর্ক থাকবেন। আপনাদের সন্তানেরা যেন মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়।

তিনি বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। এখন বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাসসহ সব কিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাই সতর্ক হবেন। যত কম ব্যবহার করা যায়। লন্ডনে দেড়শ ভাগ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। আমরা কিন্তু যে টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করি তার অর্ধেক মূল্যে মানুষকে দিচ্ছি। আর সেচ কাজের জন্য আমরা ২০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছি। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচের ব্যবস্থা করছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।দেশকে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবো।