বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের

‘রাস্তা বন্ধ করলে আপনাদের চলার রাস্তাও বন্ধ করে দেবো’

বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এখন নাকি আপনারা রাস্তা বন্ধ করবেন, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান নেবেন? রাস্তা বন্ধ করলে আপনাদের চলার রাস্তাও বন্ধ করে দেবো। চোখ রাঙাবেন না, আমাদের শেকড় এ মাটির অনেক গভীরে।’

শুক্রবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের শান্তি সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। ‘বিএনপি-জামায়াতের হত্যা, ষড়যন্ত্র ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম তিন সংগঠন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগুন নিয়ে খেললে হাত পুড়িয়ে দিবো। ভাঙচুর করতে এলে হাত ভেঙে দেবো আমরা। শান্তিপূর্ণভাবে এসেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে আবার চলে যান।’

শেখ হাসিনা বাংলার জনগণের বিশ্বস্ত প্রতিনিধি। পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশের বড় অর্জনের নাম শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি অর্জন নিয়ে এসেছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রিয় নেত্রী, জননন্দিত নেত্রী।

বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোথায় দাঁড়াবেন? আমরা ছেড়ে দেবো? সংঘাত করবো না। আমরা সংঘাত চাই না। সংঘাতের জন্য এ সমাবেশ করছি না, সমাবেশ করছি ২০১৩ ও ১৪ সালে যারা আগুন দিয়ে সন্ত্রাস করেছে, তাদের মোকাবিলা করে জনগণের সম্পত্তি ও জানমালকে পাহারা দিতে। শেখ হাসিনার নির্দেশে সেটাই করে যাচ্ছি।

শুক্রবার অর্ধেক ঢাকা আওয়ামী লীগের তরুণ কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল বলেও দাবি করেন ওবায়দুল কাদের।

একই দিনে কর্মসূচি বিষয়ে তিনি বলেন, আমাকে কেউ কেউ বলে ওরা ডেট দিলে আপনারও একই দিন ডেট দেন। যিনি বলেন, তাকে সবিনয়ে বলছি, ২০১৪, ১৫ সাল তিনি বোধ হয় দেখেননি। আমরা চুপ করে থাকলে বিএনপি কোন মূর্তিতে আভির্ভূত হবে, সেটা দেখেন নাই। তাই শপথ নিয়েছি, আগুন নিয়ে এলে পুড়িয়ে দেবো হাত। ভাঙচুর করতে এলে ভেঙে দেবো হাত।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে আসবেন, শান্তিপূর্ণভাবে চলে যাবেন। সংঘাত পরিহার করতে হবে। আমরা ক্ষমতায়, আমরা কেন সাংঘাত করবো?

বিএনপির এক দফা আন্দোলন প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, এক দফা কোথায় আছে? বিএনপির এক দফা নয়াপল্টনের কাদাপানিতে আটকে গেছে। মনে আছে গোলাপবাগের গরুর হাটে হোঁচট খেয়েছে। আর এক দফা খাদে পড়ে গেছে। এই এক দফা কোনও দিন ক্ষমতার স্বাদ পূর্ণ করতে পারবে না।

তারেক রহমান লন্ডন থেকে ফরমাশ দিচ্ছে আর দেশে ফখরুল, আমির খসরুরা লাফালাফি করছে, এমন অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারেক রহমান ভিডিওতে নির্দেশ দেয়। লন্ডনে বসে পুলিশকে ধমক দিচ্ছে। প্রশাসনকে ধমক দিচ্ছে। তারেক রহমান মির্জা ফখরুলকে বলছে, আন্দোলনে টাকার অভাব হবে না। তারেক রহমান, তোমার বাবা দম্ভ করে বলেছিল, মানি ইজ নো প্রবলেম। কোথায় তোমার বাবা? কোথায় আজ ক্ষমতা? তুমি তো ক্ষমতা এখনও দেখোইনি।

কাদের বলেন, রঙিন চশমার ফাঁক দিয়ে দুনিয়াটাকে রঙিন দেখায়। কিন্তু ফুলের ভেতরেও বিষধর সাপ আছে বাংলাদেশে। তারেক রহমান এত টাকা পেলো কোথায়? হাজার হাজার কোটি টাকা তারা পেলো কোথায়? পাচার করেছে তারেক। সিঙ্গাপুরে ধরা পড়েছে। রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়েছে। সেই তারেক রহমান এখন মির্জা ফখরুলের নেতা। এই নেতা মানে কেউ? অর্থ পাচারকারী এই চোরকে কেউ মানে? তারেক রহমান যতই লন্ডন থেকে আস্ফালন করছে, ততই তার বিরুদ্ধে খেপছে বাংলার মানুষ।

কারা লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানকে অর্থ দিচ্ছে, সেই খবর সরকারের কাছে রয়েছে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, কার কত টাকা, কারা ঘন ঘন লন্ডনে যাচ্ছে, তারেকের হাতে ডলার তুলে দিচ্ছে, আমরা জানি। ভবিষ্যতে এমপি হবেন? নমিনেশন বাণিজ্য করবেন? সে জন্য এখনই তাকে হাত করছেন? সে নিজে কোনও দিন আসতে পারবে? তার কোনও গ্যারান্টি আছে? নমিনেশনের জন্য, ভবিষ্যতের ব্যবসার জন্য তারেক রহমান টাকা লেনদেন করছে।

তিনি বলেন, লন্ডনের যাত্রী প্রতিদিনই বাড়ছে। ওখানে গিয়ে গিয়ে ডলার দিচ্ছে। ফখরুলকে বলে আন্দোলনের টাকা অভাব হবে না। শুনতে শুনতে ফখরুল মঞ্চ থেকে পড়ে গেছে। আসলে তারেক জিয়ার ধমক খেতে খেতে বেচারার অবস্থা টাইট। ওই ধমকে মঞ্চ ভেঙে বিএনপির নেতারা পড়ে গেছে। চোখ রাঙানি দিচ্ছে, দলটির নেতারা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে একটি দল, সেই দলের নেতা তারেক রহমান, ফখরুল, আমির খসরুদের কথাবার্তার দম্ভ শুনলে মনে হয়, আইন মনে না। সুপ্রিম কোর্ট মানে না। কথায় কথায় লন্ডন থেকে কোর্টকে ধমক দিয়ে কথা বলে। আপনারা এই তারেকের বিচার চান? তার সারা জীবনের দণ্ড হয়েছে। এত দম্ভ ভালো নয়। টাকার বাহাদুরি থাকবে না।

১২ কংগ্রেস ম্যানের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের কোটি কোটি টাকা। একেক সময় যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কংগ্রেসম্যানকে টাকা খাওয়ায়ে লবিস্ট নিয়োগ করে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডরের কাছে চিঠি লেখে বলে যে বাংলাদেশে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ভোট করতে হবে। এ দুঃসাহস তারা পেল কোথায়?

প্রধানমন্ত্রীকে গণভবন ছেড়ে দিতে হবে, বিএনপির নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর এমন বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমির খসরু বলেন গণভবন নাকি ছেড়ে দিতে হবে! গণভবন তোমার বাবার! জনগণ শেখ হাসিনাকে গণভবনে বসিয়েছেন। যত দিন জনগণ চাইবে তত দিন শেখ হাসিনা গণভবনে থাকবেন। তোমার তারেক জিয়া কিছুই করতে পারবে না। গণভবন থেকে হটাবেন! এত সোজা? আমরা চেয়ে চেয়ে ললিপপ খাবো? অপেক্ষা করেন।

বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে সাধারণ সম্পাদক বলেন, যারা ভুয়া ভোটার করেছে, ১৫ আগস্ট সৃষ্টি করেছে; তাদের হাতে আমাদের এই মাতৃভূমি, ক্ষমতা কোনও দিন ছেড়ে দিতে পারি না। বাংলাদেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আওয়ামী লীগ অতন্দ্র প্রহরীর মতো অবস্থান করবে।

প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বিদেশ সফরের বিষয়ে কাদের বলেন, তিনি কোনও দেশ ভ্রমণ করতে যাননি। গিয়েছেন বাংলাদেশের জনগণকে বাঁচাতে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, আপনারা হতাশ হবেন না। কারও চোখ রাঙানির পরোয়া বঙ্গবন্ধুর কন্যা করেন না। আশ্বস্ত করতে পারি আপনাদের, তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন বাবা চলে গেছে, পরিবার চলে গেছে, ভাইয়েরা চলে গেছে, আমিও একদিন হয়তো চলে যাবো। কিন্তু যাওয়ার আগে এই দেশের মানুষের জন্য আমার বাবার স্বপ্ন সফল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাবো, প্রয়োজনে রক্ত দেবো। বাংলার মানুষকে বাঁচানোর জন্য আমার বাবার অঙ্গীকার পূরণ করবো।

ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা হবে দুর্নীতির বিরেুদ্ধে; লুটপাট, অর্থপাচার ও ভোটচুরির বিরুদ্ধে। খেলা হবে তারেকের বিরুদ্ধে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে। খেলা হবে ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে। খেলা হবে ভুয়া তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে। ভুয়া এক দফার বিরুদ্ধে।

বিএনপি নেতাদের উদ্দশ করে তিনি বলেন, ক্ষমতা পেয়ে গেছেন? হায়রে ময়ূর সিংহাসন! ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন। ক্ষমতা পেয়ে গেছেন? লাফালাফি করছেন। কোথায় ক্ষমতা? যত লাফালাফি, যত তাফালিং করেন ফখরুল সাহেব, তারেক জিয়া, এই লাফালাফিতে কাজ হবে না। যতই তাফালিং করেন, ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন বহু দূরে চলে গেছে। ওইটা খুঁজে পাবেন না। লাফালাফি করবেন না। 

তিনি যোগ করে বলেন, রাজনীতির খেলার আন্দোলনে আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। রাজনীতির খেলায় আওয়ামী লীগ চ্যাম্পিয়ন। নির্বাচনে আসবেন না! কিন্তু মনোনয়ন বাণিজ্য ঠিকই তো করেছেন।

আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শাহজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।