পূজামণ্ডপ ও হিন্দুদের বাড়িঘর পাহারা দেওয়ার নির্দেশ আ.লীগের নেতাকর্মীদের

দুর্গাপূজা চলাকালে হিন্দুদের পূজামণ্ডপ ও বাড়িঘরের পাহারা দিতে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আজ শুক্রবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকের সামনে তিনি দলীয় এই নির্দেশনা দেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ভোটের সময় হিন্দুরা না হলে আমাদের চলে না। কিন্তু হিন্দুরা যখন বিপদে পড়বে, তখন আমরা তাদের পাশে থাকি না। এটাতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি না। আমার ভোটের সময় তাদের প্রয়োজন; অথচ তাদের জীবনযাপনে, তাদের ধর্মীয় উৎসব পালনে আমাদের সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হবে, যারা এরকম ঘটনা ঘটায় তারা দুর্বৃত্ত। আমি এদের হিন্দু-মুসলমান বুঝি না। এদের পরিচয় এরা দুর্বৃত্ত। এই দুর্বৃত্ত মুসলমানদের মধ্যে নেই বলার উপায় নেই।

ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের (ছবি: ফোকাস বাংলা)

আওয়ামী লীগের মধ্যেও কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করে বলে স্বীকার করেন ওবায়দুল কাদের। ২০২১ সালে দুর্গা পূজার সময় বিভিন্ন জায়গায় হওয়া সহিংসতা মোকাবিলায় সাংগঠনিক ব্যর্থতা ছিলও বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এবার যাতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মতো ঘটনা না ঘটে তার জন্য দলীয় নেতা কর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকার নির্দেশনা দেন তিনি।

পূজা নিয়ে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিতর্কিত মন্তব্য ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয়ভাবে বিষয়টি আমাদের গোচরে এসেছে। আমরা ওয়াকিবহাল। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের সঙ্গে খোঁজখবর নিয়েছেন। গোটা ব্যাপারটা নিয়ে দল থেকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কেউ অপকর্ম করে থাকে, আওয়ামী লীগের চেতনার বিরুদ্ধে কেউ কোনও কাজ করে থাকলে সেটা নিয়ে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্প্রতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, পূজা চলাকালে মদ খেয়ে নাচানাচি বন্ধ করতে হবে। আসুন কুমিল্লা থেকেই শুরু হোক মাদকমুক্ত পূজা আয়োজন। মণ্ডপে লিখে দেবেন ‘মাদকমুক্ত পূজা’। তার এ বক্তব্যের সমালোচনা করে বিবৃতি দেয় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। প্রতিবাদে গত ১৪ অক্টোবর কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিল করেছিল সংগঠনটি। সেখানে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের হামলা করা অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে মামলাও করা হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের (ছবি: ফোকাস বাংলা)

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের পার্টির সবাই খুব ভালো মানুষ এটা দাবি করার কোনও উপায় নেই। কারণ কিছু কিছু ঘটনা ঘটে, বাড়ি ঘরে আগুন লাগে, জমি দখল করে। একটা অসভ্য উদ্দেশ্যে অনেকে এসব ঘটনাগুলো ঘটিয়ে থাকে। অনেকে মানসিকভাবে এদের কথাবার্তা বলার স্বাধীনতা থাকে না। তখন সেখানে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিটা যদি গালিগালাজের সঙ্গে উচ্চারিত হয় সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা দলগতভাবে এসব ব্যাপার লক্ষ্য করছি। এদের ব্যাপারে আমরা সতর্ক করছি। পুনরাবৃত্তি রোধে এ ধরনের ঘটনার জন্য আমরা কিছু কিছু ব্যবস্থা নিতেও শুরু করেছি।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি জেএল ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, দফতর সম্পাদক মিলন কান্তি প্রমুখ।

আরও পড়ুন-

‘মদ খাওয়া লোক হাসপাতালে এলে ভালো করে ওয়াশ করবেন, যাতে আর মুখে না নেয়’

ছাত্র ঐক্য পরিষদের মিছিলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলার অভিযোগ