আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আমরা সততা দিয়ে জয় করেছি: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আমরা সততা দিয়ে জয় করেছি। আর ষড়যন্ত্র দূর করেই এখন পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ নিজেরাই শুরু করেছি। এটি জাতি হিসেবে আমাদের গর্ব। আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল এই সেতুর নির্মাণ কাজ, আমরা করছি। তবে দেশে ষড়যন্ত্র যে কমে গেছে তা নয়। ষড়যন্ত্র সব ভাবেই হয়েছে- মানুষ পুড়িয়ে, ধ্বংস করেও দেশের ভেতরে ষড়যন্ত্র করেছে বিএনপি-জামায়াত।
শুক্রবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৬তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তখন বিশ্ব দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেন নাই, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সমর্থন করেছিল, তাদেরও তো ষড়যন্ত্র ছিল। তবে তাদের কথা কেউ শুনলো না, দেশ স্বাধীন হয়ে গেল। পাকিস্তান আমাদের মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় বরণ করল। বিশ্বে অনেক শক্তিধর শক্তি সঙ্গে থেকেও তাদের জেতাতে পারল না। এই পরাজয় অনেকে সহজে মেনে নেয়নি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন দুই পরাশক্তির একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল। দেশটি পাকিস্তানকে অস্ত্রও সরবরাহ করেছিল।
তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের সামরিক সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ভারতে প্রায় এক কোটি শরণার্থী আশ্রয় নেয়। প্রবাসী বাংলাদেশি সরকারের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো কলকাতা থেকে। মুক্তিযোদ্ধারা ভারতেই প্রশিক্ষণ নিতো।

যুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠানোর ঘোষণা দেয় আমেরিকা। জবাবে, সোভিয়েত ইউনিয়নও তাদের নৌবহর পাঠানোর ঘোষণা দিলে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে যায় যুক্তরাষ্ট্র।

শেখ হাসিনা বলেন, তাই তাদের ষড়যন্ত্র চলছিল। আর সেই ষড়যন্ত্রের শিকার হলো জাতির পিতা ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্টে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে যেখানেই কাজ করতে হাত দেই, সেখানেই দেখি বঙ্গবন্ধুর হাত, তার অবদান। বঙ্গবন্ধু সব জায়গায় কাজ শুরু করে গিয়েছিলেন। একজন মানুষ, একটি সরকার মাত্র সাড়ে তিন বছরে কীভাবে এত কাজ করতে পারে, তা ভাবতেই অবাক হতে হয়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, একটি স্বাধীন দেশ গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা স্বাস্থ্যসহ সব সেক্টরেই কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি সকলকে পুনর্বাসিত করেছিলেন, লাঞ্চিত মা-বোনদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। একটি স্বাধীন দেশের আইন-কানুন তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। জাতিকে একটি সংবিধান দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি সমর্থন এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করেছিলেন।

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে। বাস, ট্রাক, লঞ্চ, স্কুল কোনও কিছুই তাদের হাত থেকে রেহাই পায় না, তারা পুড়িয়ে সবকিছু ধ্বংস করে দিতে চায়। যাদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে তাদের পরিবারের লোকজনের কীভাবে জীবন কাটছে, কেমন আছেন সেই পোড়া মানুষেরা, সেই খবর তিনি একবারও ভাবেন না।

শেখ হাসিনা বলেন, এদের চরিত্রই হলো খুনিদের নিয়ে থাকা, তাদের সঙ্গে চলা। এরা দেশের ভালোর জন্য কোনও কাজ করতে পারে না। দেশ এগিয়ে যাক এটাও তারা চায় না।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন- বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না। আমরা জাতির জনকের সোনার বাংলা গড়ে তুলবই। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু আমরা নিম্ন থাকবো না। ২০২১ সালের মধ্যে অবশ্যই আমরা মধ্যম এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত এবং দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশে পরিণত হবো।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, যিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, তার আদর্শ বুকে নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা জাতির জনকের সোনার বাংলা গড়ে তুলবই। তার জন্মদিনে এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

/পিএইচিসি/এএইচ/