বিএনপির সম্মেলন শনিবার

আরও ছয় মাস পিছিয়ে যাচ্ছে আ. লীগের সম্মেলন

আওয়ামী লীগআওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শনিবার (১৯ মার্চ)। এদিকে, এ মাসের ২৮ মার্চ ক্ষমতাসীন দলের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের পূর্ব নির্ধারিত তারিখ থাকলেও তা পিছিয়ে যাচ্ছে আরও ৬ মাস। নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো এমন আভাসই দিয়েছে। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলের কমিটিই ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এ দফায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন পেছানো হলে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের আগে আর সম্মেলন করতে পারছে না দলটি। অন্য একটি সূত্র জানায়, ডিসেম্বর পর্যন্তও পেছাতে পারে আওয়ামী লীগের সম্মেলন। নীতি-নির্ধারণী নেতাদের যুক্তি যদি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্মেলন পেছানো হয়, সে হিসেবে জুন পর্যন্ত এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপরই রমজান ও ঈদুল ফেতর। এরপরই শোকের মাস আগস্ট। হিসাব অনুযায়ী, মার্চই ছিল সম্মেলনের জন্যে উপযুক্ত সময়। এ মাসে না হলে ছায়-সাত মাস পেছানোটাই স্বাভাবিক।
নীতি-নির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, সর্বশেষ কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ২৮ মার্চ আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত সেটা পেছাতে রবিবার (২০ মার্চ) দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা বসতে যাচ্ছে। সেখানে সম্মেলনের পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ২৮ মার্চ স্থগিত করা হবে। পাশাপাশি দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ওই বৈঠকে আরও ৬ মাস কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়ার প্রস্তাব উঠবে এবং তা পাস হবে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর আগেও এক দফা ৬ মাস বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে কমিটির মেয়াদ। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের নতুন তারিখ ঠিক করা নিয়ে ওই ফোরামে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত তারিখ ওই বৈঠকে ঠিক নাও হতে পারে।

আওয়ামী লীগের দফতর সূত্র জানায়, আগামী রবিবার (২০ মার্চ) কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের এক নম্বর এজেন্ডাই দলের জাতীয় ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। সেখানে পূর্ব নির্ধারিত তারিখ স্থগিত করা হবে পাশাপাশি কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া হবে। এছাড়া, ২৬ মার্চ, ১৭ এপ্রিল, ১লা মে, ১৭ মে এসব দিবসের কর্মসূচি নির্ধারণও রয়েছে বৈঠকের এজেন্ডায়। আওয়ামী লীগ এই নিয়ে দ্বিতীয় দফা সম্মেলনের তারিখ স্থগিত করতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য গত ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি নির্ধারিত সময় পার করেছে। 

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে উপলক্ষ করে আওয়ামী লীগ সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার কথা বললেও নেপথ্যে অন্য কারণও রয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। নেপথ্যের যেসব কারণে সম্মেলন পিছিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে, তার মধ্যে অন্যতম কাকে কোন পদে রাখা যেতে পারে তা ঠিক করতে পারেনি দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এ পদে আর থাকতে চান না। সেক্ষেত্রে তার বিকল্প কে হতে পারে তাও এখন পর্যন্ত ঠিক করা সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বিশ্বস্ত ও যোগ্য সাধারণ সম্পাদক এখনও ঠিক করতে পারেনিনি। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি নানা মহলের ‘নিস্ক্রিয়তা’র অভিযোগ থাকলেও দলটির অধিকাংশ কর্মীসমর্থক এখনও তাকেই সাধারণ সম্পাদক পদের জন্যে উপযুক্ত মনে করেন। কিন্তু আশরাফ চান দলের অন্য নেতাদের সুযোগ করে দিতে চান। সৈয়দ আশরাফের ঘনিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করে, সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনেই তৃণমূল কাউন্সিলরদের কাছে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্বভার তুলে দিয়ে বিদায় নেবেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী  মতিয়া চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সম্মেলন নাও হতে পারে। রবিবারের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কী কারণে সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর অন্যতম কারণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন।

জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর অন্য সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ২৮ মার্চ আওয়ামী লীগের সম্মেলন না হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। ইউনিয়ন পরষদ নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যস্ত সময় পার করেছেন, তাই সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি বলেই পিছিয়ে দিতে হচ্ছে জাতীয় সম্মেলন।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণে ২৮ মার্চ আওয়ামী লীগের সম্মেলন পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে অন্য কোনও কারণ এখন পর্যন্ত নেই। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলন ইউপি নির্বাচনের কারণে পেছাচ্ছে না। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হবে এমনটা জেনেই আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্দিষ্ট করেছিল। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সম্মেলনের তেমন ব্যাঘাত ঘটার কথাও না। সারাদেশের সব জায়গায় তো একসঙ্গে নির্বাচনও হচ্ছে না। আর ইউনিয়ন পর্যায়ের সব নেতাদের সম্মেলনে আসতে এমন বাধ্যবাধকতাও নেই।

/এমএনএইচ/