খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারেন কেরি

খালেদা জিয়া ও জন কেরি


সোমবার মাত্র নয় ঘণ্টার ঝটিকা সফরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। তার সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে শেষ মুহূর্তের চেষ্টা চালাচ্ছে দলটি। বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে পররাষ্ট্র বিষয়ক একটি দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, জন কেরির সঙ্গে বিএনপি প্রধানের সাক্ষাৎ অনেকটাই নিশ্চিত। সোমবার সন্ধ্যার শুরুতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে বসবেন কেরি। এর আগে বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি।

প্রথমবারের মতো এই সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন জন কেরি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে। এছাড়া পেশাজীবী, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তার মতবিনিময়ের সম্ভাবনা আছে।

বিএনপির দুজন ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা দাবি করেন, জন কেরির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জন কেরির বৈঠকের সম্ভাবনা শতভাগ। তবে এখনও শিডিউল হয়নি। এ ব্যাপারে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপির কূটনীতিক উইংয়ে কাজ করেন এমন তিনজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের মধ্যে ড. আবদুল মঈন খান বিদেশে আছেন। সাবিহ উদ্দিন আহমদ রবিবার বিকালে দেশে ফিরেছেন। ইনাম আহমেদ চৌধুরী এখনও নিশ্চিত কিছু বলতে পারেননি।  

জানতে চাইলে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস কোনও যোগাযোগ করেছে কিনা, জানা নেই। জন কেরি গুড ডেমোক্র্যাট। তিনি নিশ্চয় খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন। আমাদের দিক থেকেও উদ্যোগ থাকা উচিত।’

স্থায়ী কমিটির নতুন সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার জানা নেই জন কেরির সঙ্গে ম্যাডামের সাক্ষাৎ হবে কিনা। তিনি কী এজেন্ডা নিয়ে আসছেন। সরকারের সঙ্গে এজেন্ডা নাকি বিরোধী দলগুলোর সঙ্গেও এজেন্ডা আছে, সেটা তো জানি না।’ এ ব্যাপারে আমির খসরু বিএনপির ফরেইন দিক দেখার দায়িত্বে থাকা সাবিহ উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের অন্যতম সদস্য সাবিহ উদ্দীন রবিবার পৌনে ৫টার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি দেশে ছিলাম না। এই মাত্র ইয়ারপোর্টে ল্যান্ড করেছি। কিছুই বলতে পারব না।’

তবে বিএনপির একটি সূত্র বলছে, সাক্ষাতের বিষয়ে বাধা হতে পারে প্রটোকল। এর আগে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক হলেও এবার রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের বাইরে আছেন তিনি। এক্ষেত্রে সাক্ষাতের সম্ভাবনা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে দলটির অনেক নেতার।

জানা গেছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জন কেরির এটি প্রথম ঢাকা সফর হলেও গত পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এটি দ্বিতীয় ঢাকা সফর। ২০১২ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন। হিলারি বাংলাদেশ সফর শেষে ভারতে গিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনও জন কেরির সঙ্গে সাক্ষাতের কোনও উদ্যোগের কথা আমি জানি না। নট টু মাই নলেজ। তবে সম্ভাবনা আছে। তিনি তো শর্ট টাইমের জন্য আসছেন। এর আগে হিলারি ক্লিনটন তো খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। যদিও ওই সময় খালেদা জিয়া লিডার অব অপজিশন ছিলেন। এখন তো প্রটোকল একটা বাধা হতে পারে। তবে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। রবিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আশা করছি সাক্ষাৎ হবে। তবে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছি না। সাক্ষাতের ব্যাপারে বিএনপির প্রস্তুতি আছে কিনা, কারা থাকবেন বৈঠকে, এ নিয়ে কিছুই জানা নেই।’

জানা গেছে, খসড়া সফরসূচি অনুযায়ী, জন কেরি ২৯ আগস্ট সকালে জেনেভা থেকে ঢাকায় আসবেন। ওই দিনই তার ঢাকা থেকে দিল্লি যাওয়ার কথা রয়েছে।

জন কেরির সফরের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট এ মাসে চারবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেছেন।

জানতে চেয়ে একাধিকবার ফোন করা হলেও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রিসিভ করেননি।

আরও পড়তে পারেন: দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্বে জোর দেবেন কেরি

/এসটিএস/এমএনএইচ/