ঢাকা-১০ উপনির্বাচন: হিসাব কষছে বিএনপি

নির্বাচন-কমিশনঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের ছেড়ে দেওয়া শূন্য আসনে (ঢাকা-১০) উপনির্বাচনের অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে হিসাব কষছে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা এই আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না করলেও আগ্রহী প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীরা ভাবছেন সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে। দলটির একাধিক নির্ভরযোগ্য নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিএনপি নেতারা জানান, ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোট কার্যক্রম সন্তোষজনক না হলে ঢাকা-১০ উপনির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। তবে, ইতোমধ্যে প্রার্থী কে হতে পারেন, তা নিয়ে দলটিতে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান। তবে, এবার এই আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নে পরিবর্তন হচ্ছে।

দলটির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আবদুল মান্নান বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত। তিনি ঠিকমতো হাঁটাচলাও করতে পারেন না। তাই উপনির্বাচনে তাকে প্রার্থী করা হবে না।

জানা গেছে, ঢাকা-১০ আসন উপনির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে চান দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ধানামন্ডি থানা বিএনপির সভাপতি শেখ রবিউল আলম ও আবদুল মান্নানের মেয়ের জামাই দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম। এর মধ্যে শেখ রবিউল একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়নও পেয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে তিনি গ্রেফতার হওয়ার তাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে ব্যারিস্টার অসীম দীর্ঘদিন বিদেশে রয়েছেন। তবে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে অসীমের ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলেও দলীয় সূত্র দাবি করে।

উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চান কিনা—এমন  প্রশ্নের জবাবে শেখ রবিউল আলম বলেন, ‘দল যদি উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমি প্রার্থী হতে আগ্রহী। সেই প্রস্তুতিও রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনে আমি দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচনের আগেই আমাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কারাগারে থেকে নির্বাচন করা অনেক কঠিন। তাই তখন ওই নির্বাচনে আর প্রার্থী হইনি।’

উপনির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। একটি পক্ষ চায়, আবদুল মান্নানের পরিবারের কেউ প্রার্থী হোক, অন্য পক্ষ চায় শেখ রবিউল আলমকে।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ধানমন্ডি থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সফিক উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘মান্নান ভাই অনেকদিন ধরে অসুস্থ। তিনি একটানা ১০ হাত পথও হাঁটতে পারেন না। আর অসীম সাহেব তো দেশেই থাকেন না। কেউ যদি ২-৩ বছর পর দেশে এসে বলে আমি প্রার্থী, স্থানীয় নেতারা কি তা মেনে নেবেন? আর রবিউল আলম সব সময় এলাকায় থাকেন, নেতাকর্মীরাও বিপদে-আপদে পাশে পান। তাই আমরা প্রার্থী হিসেবে তাকেই চান।’

ধানমন্ডি থানার ১৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি আবু নাছের লিটন বলেন, ‘এই এলাকায় আবদুল মান্নান সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় লোক। এছাড়া ব্যারিস্টার অসীম জনপ্রিয়। এর মধ্যে কাউকে আমরা উপনির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাই।’

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘ঢাকা-১০ আসনের নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়নি। সময় হলে হবে।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঢাকার আসনে বিগত নির্বাচনের মতো উপনির্বাচনে বিএনপি যাবে কিনা, সেটা ঠিক করবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’ তিনিই উপনির্বাচনের প্রার্থী ঠিক করবেন বলেও দলটির এই নেতা মন্তব্য করেন।