টিকা নিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিকার: বিএনপির এমপি হারুন

করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিকার বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘চীন ও রাশিয়া ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে প্রথমে এসেছিল। তারা ট্রায়াল দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা তাদের ট্রায়ালের অনুমতি দেইনি। তাদের প্রস্তাব সেই সময় গ্রহণ করলে এখন আমাদের ভ্যাকসিনের সংকট হতো না। ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিকার। যে কারণে ভ্যাকসিন নিয়ে চীনের সঙ্গে কথা হলেও ভ্যাকসিন পাবো কিনা তা অনিশ্চিত। আশা করবো, এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণে সরকার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’

বাজেটে ভ্যাকসিনের সুনির্দিষ্ট কোনও গাইডলাইন দেওয়া হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন আমাদের দিতে হবে। দেড়বছর হলো আমরা করোনা প্রাদুর্ভাবে পড়েছি। দুই শতাংশ মানুষকেও আমরা এ সময়ে ভ্যাকসিন দিতে পারিনি।’

সরকার করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘ভারতের ধরন ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। গোটা বাংলাদেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে।’

বাংলাদেশে যেন ভারতের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেই কামনা করে তিনি বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সারা দেশকে অস্থির করে তুলেছে। রাজশাহী বিভাগে করোনা মারাত্মক পরিস্থিতি ধারণ করছে। মওসুমে আম চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নেই দাবি করে বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য চলতি অর্থবছরে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা জনগণের কাজে লেগেছে বা কোভিড নিয়ন্ত্রণে ব্যয় হয়েছে, সরকার তা বলতে পারবে না। কত টাকা কোভিড নিয়ন্ত্রণে ব্যয় হয়েছে সরকারকে তার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে।’ এ সময় তিনি যেসব এলাকায় করোনা বেড়েছে সেখানে অন্তত একশ’ বেডের করোনা ইউনিট স্থাপনের দাবি করেন।

স্বাস্থ্য বিভাগকে সংস্কারের দাবি করে তিনি বলেন, ‘সরকারি চিকিৎসকরা সরকারি হাসপাতালে ডিউটি না করে ব্যক্তিগত ক্লিনিকে দায়িত্ব পালন করছেন’

তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল আমরা চাই। কিন্তু তার আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে। মানুষ বাঁচলে সবকিছু আসবে। স্বচ্ছ তালিকা করে সামাজিক সুরক্ষা খাতের অর্থ দিতে হবে।’

নতুন অর্থবছরের বাজেটের সমালোচনা করে হারুনুর রশীদ  বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর বাজেটের শিরোনাম শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু বাইরে এর প্রতিক্রিয়া ভালো নয়। নতুন অর্থবছরের ছয় লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার বাজেটে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণনির্ভর। এই ঋণনির্ভর বাজেট ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এত ব্যাপক ঋণনির্ভর বাজেট অতীতে কোনও সরকারের আমলে হয়নি। চলতি বছরের বাজেট অবাস্তবায়িত রয়েছে। করোনাকালীন সরকারে যে বাজেট দেওয়া দরকার ছিল, সরকার তা দিতে পারেনি। সরকারের নীতি ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে জনদুর্ভোগ ও মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় মানুষের দুর্ভোগ আমরা দেখেছি। ৫শ’ টাকার ভাড়া তিন/চার হাজার টাকা দিতে হয়েছে। ফেরিঘাট থেকে ঢালাওভাবে মানুষ পার হওয়ায় সংক্রমণ বেড়েছে। বেআিইনি স্পিডবোটে পার হতে গিয়ে কতগুলো প্রাণ গেলো। এর দায় সরকারকে নিতে হবে না?’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ওপর প্রস্তাবিত ভ্যাট প্রত্যাহার চাই

বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিতে হারুন বলে, ‘দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে শিক্ষার কোনও বিকল্প নেই। অথচ দেখলাম— নতুন বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যালে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এটা কোনও কথা হলো?’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানসন্মত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে সেখানে বেশি শিক্ষার্থী পড়াশুনা করে। কেন সেখানে করারোপ করা হলো? এই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এই কর প্রত্যাহার হওয়া উচিত। সাধারণ বাজেটে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সময় চাই। এই বিষয়গুলো আমরা আলোকপাত করতে চাই।’