তেলের দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক ফখরুলের

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিকে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে উল্লেখ করে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে ‘জেগে ওঠা’র ডাক দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ভয়ংকর প্রভাব ফেলবে সমগ্র দেশের অর্থনীতির উপর, এটা বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’

শনিবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক ছাত্র সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন। ভোলায় পুলিশের গুলিতে জেলা সভাপতি নুরে আলমের মৃত্যুর প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ছাত্র দলের উদ্যোগে ঢাকায় এই সমাবেশ হয়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর দুইটার বেশি সময় পর্যন্ত এই সমাবেশ হয়। এই সমাবেশে ছাত্রদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে মঞ্চের পাশের সড়কে সকালের দিকে কিছুক্ষণ যান চলাচল করলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আর সময় নেই। আমাদের সকলকে জেগে উঠতে হবে, জেগে উঠে এদেরকে (সরকার) পরাজিত করতে হবে। আসুন আমরা আজকে সেই লক্ষ্যে আরও দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলি। ছাত্র দলের এই সমাবেশ থেকে আমি আহবান জানাতে চাই, সকল ছাত্র, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনগুলো— আপনারা ঐক্য গড়ে তুলুন। আমরা সকল রাজনৈতিক দলকে আহবান জানাতে চাই, আসুন আজকে জাতির প্রয়োজনে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজনে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ, অগণতান্ত্রিক, দানবীয়, কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগণের পার্লামেন্ট ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।”

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এই জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাবে পরিবহন ব্যয়, পরিবহন ভাড়া। একই সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল-ডাল-আটা-তেল আবার দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মাঝখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কে? ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের সাধারণ মানুষ— যারা দিন আনে দিন খায়। এভাবে বার বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আজকে সকালেই দেখলাম, কাচা মরিচের কেজি তিন শ টাকা।”

তিনি বলেন, ‘‘সরকার আইএমএফ-এর ঋণ চেয়েছে প্রায় ৪ শ কোটি ডলার। কারণ তারা এতো মিথ্যাচার করে এসেছে যে, রিজার্ভে এতো টাকা আছে, এতো ডলার জমা আছে তাদের কোনও চিন্তার কারণ নেই। আজকে রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবির কাছে ডলার ঋণ চেয়েছে।”

ফখরুল উল্লেখ করেন, আইএমএফ-এর ডলার ঋণের শর্ত খুব শক্ত। তারা বলেছে যে, কোথাও কোনও অধিক ব্যয় করা যাবে না… তারা বলেছে, আজকে যেসব খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে সেই ভর্তুকিগুলো প্রত্যাহার করা হোক।” 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘অন্যায়-অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বললে তারা (সরকার) বলে যে, এটা চক্রান্ত। চক্রান্ত তো করেন আপনারা। বার বার বলেছি যে, কে চক্রান্ত করছে বলেন। আমরা চক্রান্ত করি না। আমরা প্রকাশ্যে ঘোষণা নিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য জনগণের কাছে যাচ্ছি এবং তাদেরকে নিয়ে আমরা রাজপথে ফয়সালা করব।”297794641_1279518626115321_2973356161973076571_n

সমাবেশে ছাত্রদল মহানগর উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে সমবেত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় থেকে নয়া পল্টনে কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে ছাত্র সমাবেশটি সরব হয়ে ওঠে। সমাবেশের দুই প্রান্তে ব্যাপক পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য মোতায়েন দেখা গেছে।

ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবন এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের পরিচালনায় ছাত্র সমাবেশে বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, আমিরুল ইসলাম আলীম,  সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শহিদুল ইসলাম বাবুল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান, আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আখতার হোসেন প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।