শনিবার নয়া পল্টনে কর্মসূচি

বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালে বিএনপি কীভাবে সমাবেশ ডাকে: নাসিম

২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি ‘বিএনপি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া’ শুরু করেছিলেন কামরুল হাসান নাসিম। ক্রীড়ালোকের প্রধান সম্পাদক, লেখক কামরুল হাসান নাসিম। গণমাধ্যমে তার এই প্রক্রিয়ার কথা ওঠে আসে ‘আসল বিএনপি’ পরিচয়ে। আগামী শনিবার (২৬ নভেম্বর) ও মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) তিনি আবারও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকা নয়া পল্টনে অবস্থান কর্মসূচি ডেকেছেন। তবে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে।

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) সকালে বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেন কামরুল হাসান নাসিম। বিএনপির সমাবেশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি জনগণের দল নয়। ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ ডেকে তা পুনরায় প্রমাণ করলো। তারা সাধারণ মানুষের সাংস্কৃতিক পছন্দের অভিরুচিতে কী কী আছে বা থাকে, তাও জানে না। যদি তাদের মন সাংস্কৃতিক হতো, তাহলে বিশাল আয়োজনের এমন উদ্যোগ বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর চলাকালীন কীভাবে হয়?

‘বলা যায়, আমিও তো এই সময়েই রাজপথে কর্মসূচি দিলাম। হ্যাঁ, আমি দিয়েছি। সরকারি ছুটির দিনে দিয়েছি। লাখ লাখ জনতা নিয়ে এই মাসে সূচি প্রদান করি নাই। আর বেলা ১১টা থেকে ১টার মধ্যে সে সূচি শেষও হয়ে যাবে।’ জানান কামরুল হাসান নাসিম।image(6)

২০১৫ সালের পর আবারও বিএনপি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার উদ্যোগ, কেন? এমন প্রশ্নের ব্যাখ্যায় কামরুল হাসান উল্লেখ করেন, বিএনপি পুনর্গঠন করার রাজনৈতিক উদ্যোগ ছিল ও আছে। এমন অভিনব রাজনৈতিক লড়াইটি করার বয়স প্রায় আট বছর। ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি এমন যাত্রার শুরুটা হয়েছিল। দলের ক্রান্তিকালীন সময়ের মুখপাত্র হিসাবে একজন সাধারণ মানুষ ও দলের সদস্য হিসাবে বলেছিলাম, বিএনপির ৫টি অসুখ হয়েছে। অসুখ সারাতে হবে। সে লক্ষ্যে ২০১৫ সালে প্রায় ত্রিশটি কর্মসূচি শেষ করার পর ওই বছরের ২৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী জনতার নিম্ন আদালত বসাতে সক্ষম হই।’

নাসিমের ভাষ্য, ‘সেই প্রতীকী আদালতে আমি বাদী ছিলাম। বিবাদী হিসাবে নির্দিষ্ট সেই পাঁচটি অসুখকে দাঁড় করানো হয়েছিল। এক. দল পরিচালনায় দুই শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যর্থ ও অযোগ্য। দুই. দলটি নাশকতাকে সঙ্গী করছে। তিন. দলটি জাতীয়তাবাদী নয়, জামায়াতবাদী দল হয়ে পড়েছে। চার. বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা। পাঁচ. জনস্বার্থ সংরক্ষণের রাজনীতি করা হচ্ছে না।’

‘এমন প্রেক্ষিতে ২৬ নভেম্বর, ২০১৫ সালে ওই প্রতীকী আদালতে আমি উপস্থিত জাতীয়তাবাদী জনতার কাছে দুইটা রায় চাই। এক. দলের গঠনতন্ত্র স্থগিত করা হোক। দুই. একটি ক্রেডিবল কাউন্সিল করে দলের নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই জাতীয়তাবাদী জনতার উচ্চ আদালত বসাতে হবে। তখন বিচারক হিসাবে থাকা জনতা আমার পক্ষে রায় দেয়। তখন আমি দলের পক্ষ থেকে দলীয় বিপ্লব করা হবে বলে ঘোষণা করি।’ বলছিলেন কামরুল হাসান নাসিম।

তিনি বলেন, ‘ঠিক ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি, ১৭ জানুয়ারি, ৫ মে ও ১৭ সেপ্টেম্বর রাজপথে দলীয় বিপ্লবের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। চারবারই দলের সদস্যরা নয়া পল্টন কার্যালয়ের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করে। তারা দাবি করে যে, এখানেই বসবে উচ্চ আদালত। কিন্তু প্রতিবারই আমাদের দলের অপর অংশ বরাবরের মতো করে আমাদের মিছিলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপর পুনর্গঠনের ইস্যুটিকে বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেয়ে বিভিন্ন সুপারিশ, সমালোচনা অব্যাহত রাখে।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে দুই দফায় নাসিমের অনুসারীদের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি নয়া পল্টনে আসল বিএনপির গাড়িতে আগুন। ছবি নাসিরুল ইসলাম

২৬ নভেম্বর মূলত কী করবেন, আপনার উদ্যোগে জমায়েত কেমন হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রতীকী উচ্চ আদালত বসানোর দিন  দুই লাখ জাতীয়তাবাদী জনতা যথেষ্ট। ২৬ নভেম্বরে লাখ নয়, হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে।’

সেদিন বিএনপির উদ্দেশ্যে কী থাকবে আপনার বক্তব্যে—এমন প্রসঙ্গে নাসিম বলেন, ‘৫টি অসুখ মুক্ত হও। এই বছর পর্যন্ত সময় দেওয়া যেতে পারে। দলের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করো। এরপর  একটা ক্রেডিবল কাউন্সিল করো। অতঃপর আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে সরকার দলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য কাজ করতে হবে।’

অভিযোগ রয়েছে, পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সরকারের সহযোগিতায় করা হয়ে থাকে? এ বিষয়ে কামরুল হাসান নাসিমের জবাব, ‘আমার খুব ইচ্ছে হয়, দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল আমার ও আমাদের চিন্তাটাকে একটিবারের জন্য চিন্তা করে যদি বলতো—আমরাও তোমার পাশে থাকতে চাই। ওই দলটা এত দুষ্টু কেন,  ওদেরকে ভাল করতে হবে—সবাই যদি এই কথা বলে আমার পাশে থাকতো, মন ভাল হয়ে যেতো। বিএনপি দুষ্টু হয়েও জনপ্রিয়। আমি চাই, বিএনপি ভালো হয়ে জনপ্রিয় হোক।’