বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জাফরুল্লাহর

বিএনপিকে সংলাপে ডাকতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। রবিবার (২৬ মার্চ) বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে তিনি এ অনুরোধ করেন। তবে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রবিবার বঙ্গভবনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ মন্ত্রিসভার সদস্য, রাজনীতিক, মুক্তিযোদ্ধাসহ সমাজের বিশিষ্টজনেরা অংশ নেন।  দীর্ঘদিন কিডনি রোগে আক্রান্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও হুইল চেয়ারে বসে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

জানা গেছে, বঙ্গভবনের লনে বিকাল ৫টায় অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘুরে ঘুরে অনেকের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও কুশলাদি বিনিময় করেন। এ সময় তিনি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কুশলাদি বিনিময়ের একপর্যায়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দ্বাদশ নির্বাচন ইস্যুতে সৃষ্ট সংকট নিরসনে বিএনপিসহ বিরোধী দলকে সংলাপে ডাকতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন। ওই সময় উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সংলাপ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক সাড় দেননি। প্রধানমন্ত্রী ওই সময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর সমবেদনা জানাতে বাসায় গেলে ঢুকতে না দেওয়া এবং ওই সময় সংলাপের আহ্বান জানিয়ে টেলিফোন করলেও তাতে সাড়া না দেওয়া, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত সংলাপের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অনুরোধের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আমাকে হত্যার চেষ্টা করে, আমার পিতা-মাতাকে হত্যা করেছে, শোক জানাতে বাসায় গেলে গেট বন্ধ করে দেয়, তাদের সঙ্গে কী সংলাপ করবো? আর তাদের সঙ্গে তো আলোচনা আগেই করেছি, কিন্তু কোনও লাভ তো হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তো সংলাপ করেছি। কিন্তু তার ফল কী হয়েছে? এখন তাদের সঙ্গে সংলাপ করে কী হবে? ওদের সঙ্গে কী আলোচনা করবো?’ এরপরও জাফরুল্লাহ চৌধুরী আলোচনার বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহর সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়কালে তিনি বিএনপির সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন। জবাবে তাদের (বিএনপি) সঙ্গে কেন সংলাপে বসতে প্রধানমন্ত্রী আগ্রহী নন, তার কারণ তুলে ধরেছেন শেখ হাসিনা।’

বিষয়টির সত্যতা জানতে ডা. জাফরুল্লাহর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন করা হলে অন্য একজন তা রিসিভ করেন। তিনি বলেন, ‘স্যার হাসপাতালে ভর্তি। তিনি কথা বলতে পারবেন না।’ তিনি জানান, রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদানের পরে তিনি কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী কাতার সফর শেষে দেশে ফিরলে গত ১৩ মার্চ গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনেও বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করবেন কিনা, প্রশ্ন করা হলে একই ধরনের মন্তব্য করে তা নাচক করে দেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে ডা. জাফরুল্লাহও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিএনপিসহ বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়ে আসছেন। গত ১২ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশে সুশাসনের জন্য বিরোধী দলের কথা শোনেন। আলাপ-আলোচনায় অংশ নেন। তাহলেই দেখবেন, সুশাসনের পথে অগ্রসর হচ্ছে।’