রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিএনপির সমাবেশ

সরকার পাকিস্তানি বাহিনীর প্রেতাত্মা: মির্জা ফখরুল

মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস উপলক্ষে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সমাবেশ করেছে বিএনপি। সোমবার (২৭ মার্চ) রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধাদের এই গণসমাবেশ হয়। এতে সারা দেশের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নেন। তাদের হাতে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। অনুষ্ঠানে ‘বর্তমান সরকার পাকিস্তান বাহিনীর প্রেতাত্মা’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  তিনি বলেন, ‘আপনারা কি যুদ্ধ করেছিলেন আজকের এই বাংলাদেশের জন্যে? আজকের বাংলাদেশ—এখন এটা একাত্তর সালের পাকিস্তান বাহিনীর এবং পাকিস্তানি শাসকের প্রেতাত্মার বাংলাদেশ।’

ফখরুল বলেন, ‘যেভাবে পাকিস্তানিরা শাসন করেছে, শোষণ করেছে, মানুষের রক্ত চুষে নিয়েছে—আজকে একইভাবে এই আওয়ামী লীগের সরকার, যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে, তারা একইভাবে বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ করছে, তাদের রক্ত শোষণ করছে এবং মানুষকে তারা ভয়ংকরভাবে নির্যাতন করছে।’

তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশ আমরা চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম কোন বাংলাদেশ? যে বাংলাদেশের স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছিলেন সেই পূর্বপুরুষরা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, যেটা একটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ—যেখানে সব মানুষ সাম্যের মধ্যে বাস করবে, ন্যায়বিচারের মধ্যে বাস করবে, মানবিক মর্যাদা নিয়ে বাস করবে, কল্যাণের মধ্যে বাস করবে—সেই বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম।’

মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা যারা একসময়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম, যারা জীবনবাজি রেখে লড়াই করেছেন, আজকে আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে—এই যে নতুন প্রজন্ম, তাদের কাছে সেই বাণী পৌঁছে দেওয়া যে আমাদের যখন যৌবন ছিল, আমরা লড়াই করেছি, যুদ্ধ করেছি, একটা স্বাধীন ভূখণ্ড নিয়ে এসেছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে বলা—‘এখন তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করবার জন্য, গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার জন্য, অধিকারকে রক্ষা করবার জন্য… তুমি যে নাগরিক স্বাধীন দেশের, তোমার ভোট দেওয়ার অধিকার আছে, বেঁচে থাকার অধিকার আছে, সেটাকে রক্ষা করবার জন্য তোমাকে আরেকটা মুক্তিযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’ আজকে দেশকে রক্ষা করবার জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে হটাতে হবে।’’

বিএনপি আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশগণসমাবেশের মঞ্চে দলের চেয়ারপারসন  খালেদা জিয়ার জন্যে একটি চেয়ার সংরক্ষিত রাখা হয়। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের সাত জনের (তারেক রহমান, শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ইশরাক হোসেন, নিপুণ রায় চৌধুরী, সোনিয়া সান্তা, জামাল হোসেন টুয়েল) হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া হয়। জিয়াউর রহমানের ছেলে তারেক রহমানকে দেওয়া বাংলাদেশের পতাকা গ্রহণ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থাৎ ভিন্নমত পোষণকারী যারা মুক্তিযোদ্ধা, তারা কি ভাতা পাচ্ছেন এখন? না। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম উঠেছে? ওঠে নাই। এই সরকার তাদের সঙ্গে যারা একমত হবে না, তাদের সবাইকে তারা সব রকমের অত্যাচার-নির্যাতন করে দমন করে রাখতে চায়।’

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, ফজলুর রহমান, আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জয়নুল আবেদিন, সিরাজুল হক, শাহ আবু জাফর, মুক্তিযোদ্ধা দলের আবদুল হালিম, কামাল উদ্দিন, নুরুল করিম, এবাদুল হক, আবদুল খালেক মণ্ডল, আবদুল মান্নান, মোকসেদ আলী মোঙ্গলিয়া, আব্বাস উদ্দিন, জহিরুল আলম তালুকদার রুকু, ওয়াহিদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে ইনস্টিটিউশনের বাইরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহজাহান ওমর বীরোত্তম এবং গণসমাবেশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন আরেক ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম।