প্রবাসীদের গালি দিয়ে বেকায়দায় বিএনপি নেতা

নিজ দল বিএনপির লন্ডনপ্রবাসী নেতাদের গালাগালি করে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি নাসের রহমানের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে লন্ডন বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। যা এখন ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনা চলছে।

গত ২২ অক্টোবর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় তার নিজের সমর্থিত কুলাউড়া বিএনপির একাংশের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে নাসের রহমান বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে নাসের রহমানের অনুসারী জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক মোশাররফ বিএনপির ভেতরে নাসের রহমানের মৌরসী বা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অধিকার বলে বক্তব্য দেন।

যদিও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, নাসের রহমানের বক্তব্য খণ্ডিত ও এডিট করে প্রচার করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি প্রবাসী কমিউনিটির বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ ও কমিউনিটির নেতারা লন্ডনপ্রবাসীদের নিয়ে নাসের রহমানের বক্তব্যে বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন। খোদ প্রবাসী বিএনপির নেতাকর্মীরাই তার বক্তব্যের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ফেসবুকে।

প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক চিফ হুইপ ও কাউন্সিলর সুনাওর আলী মঙ্গলবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র কেনার টাকা, বাংলাদেশ বিমানের প্রথম উড়োজাহাজ কেনা, রেমিট্যান্স—সবই লন্ডনপ্রবাসীদের অবদান। যিনি লন্ডনপ্রবাসীদের নিয়ে এসব ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন, তার বাবা এমনকি তার সন্তানরাও এ দেশে লেখাপড়া করেছেন। তার পুরো বক্তব্য নিজের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সীমাহীন ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অশ্লীল, যা সামাজিকভাবে বলার অযোগ্য। নিজের দল ও হাইকমান্ডকে টেনে এনে তিনি নিজেই দম্ভভরে বলেছেন, এত দিন তিনি যাকে খুশি তাকেই কমিটির নেতৃত্বে এনেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন, তিনি ২২ বছর ধরে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি। তার নিজের মুখে স্বীকার করা এত স্বেচ্ছাচারিতার পর ২২ বছর একই পদে থাকাটাও তো অগণতান্ত্রিকতার বড় উদাহরণ।

যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন ইউকে-বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী বলেন, সিলেটের শ্রদ্বেয় নেতা সাইফুর রহমানের সন্তানের যোগ্যতা নিয়ে দলের রাতারাতি জেলা সভাপতি হওয়া নাসের রহমান নিজের দলের নেতাকর্মীদের রক্ত খারাপ বলে দেওয়া বক্তব্যে আমি হতবাক ও বিস্মিত। উনি যেসব কথা বলেছেন, তা সিলেটের বাইরের কেউ বললে এতক্ষণে লন্ডনে কয়েকটা প্রতিবাদ সভা হতো। আমরা প্রবাসী কমিউনিটির পক্ষ থেকে অবিলম্বে নাসের রহমানকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘সুরমা’র প্রধান সম্পাদক, ১৯৮২ সালে নির্বাচিত ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফরিদ আহমদ রেজা চার দশক ধরে লন্ডনপ্রবাসী।

মঙ্গলবার বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, রাজনৈতিক একটি মঞ্চে রাখা নাসের রহমানের ওই বক্তব্য অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ ও আগাগোড়া অরাজনৈতিক। তার বয়সের, তার পর্যায়ের মানুষের কাছ থেকে এমন বক্তব্য একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। তার দল যখন সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথা বলছে, সেই সময়ে তার বক্তব্য সেই ঐক্যের চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী।

আশির দশকে মৌলভীবাজারের সাবেক ছাত্রনেতা, লন্ডনে বসবাসরত আব্দুল বাসিত চৌধুরী খোকন বলেন, একজন মানুষের বক্তব্য তার রুচির পরিচায়ক। নাসের রহমানের উচিত লন্ডনপ্রবাসীদের কাছে অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়া।

ভয়েস ফর জাস্টিস ইউকের সেক্রেটারি ও যুক্তরাজ্যে কমিউনিটির বর্ষীয়ান ব্যক্তিত্ব কে এম আবু তাহের চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, নিজের দলের একজন প্রবাসী কর্মীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে লন্ডনিদের প্রতি কটূক্তি করা মোটেই সমীচীন হয়নি। বিএনপির মতো বড় একটি রাজনৈতিক দলের নেতার এ ধরনের লাগামহীন বক্তব্য অবশ্যই প্রত্যাহার ও দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।

নাসের রহমানের আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নাসির আহমেদ শাহীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দলের দায়িত্বশীল পদে থেকে দল যখন ঐক্যবদ্ধ যুগপৎ আন্দোলনে, তখন তার এ রকম বক্তব্য রাখা উচিত হয়নি। প্রবাসীরা জীবন-জীবিকাকে এক পাশে রেখে দলের জন্য কাজ করেন। তার উচিত বক্তব্য প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করা।

লন্ডনপ্রবাসী কুলাউড়ার সাবেক ছাত্রদল নেতা অলিউর রহমান চৌধুরী ফাহিম বলেন, তার এ রকম বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি। দল চলবে দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক, কারও গলার জোরে নয়।

বিএনপির তিনবারের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও বিএনপি চেয়ারপারসের উপদেষ্টা মাহিদুর রহমান বলেন, একজন প্রবাসী যদি কোনও ভুল করে থাকেন, সেটার জন্য নাসের রহমানের পুরো লন্ডন প্রবাসীদের নিয়ে ঢালাওভাবে মন্তব্য করা সমীচীন হয়নি।

এদিকে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক এম ইদ্রিস আলী স্বাক্ষরিত পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, ‘জেলা বিএনপির সভাপতি নাসের রহমানের বক্তব্য খণ্ডিত আকারে স্থানীয় কয়েকটি অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। যা দেশে-বিদেশে ব্যক্তি ইমেজ ক্ষুণ্ন করার শামিল। মূলত লন্ডনপ্রবাসী এক নেতা দেশে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন বলে আশ্বস্ত করে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হন। অথচ তিনি তার কথা রাখেননি এবং কাউন্সিলে উপস্থিত হননি। তার এই আশ্বাস ভঙ্গের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে সভাপতি নাসের রহমান কাউন্সিলরদের উদ্দেশে বলেন, ভবিষ্যদে দলের কোনো আহ্বায়ক কমিটিতে বিদেশিদের রাখা সমীচীন হবে না।’