২৮ অক্টোবরের পর ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতারা সামনে আসছেন

গত ২৮ অক্টোবর দলীয় মহাসমাবেশের দিন পুলিশের সঙ্গে বিএনপির কর্মীদের সংঘর্ষের পর আটক করে কারাগারে পাঠানো হয় দলের মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ নেতাকে। এদিকে গ্রেফতার এড়াতে নিশ্চুপ হয়ে যান অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা। কেউ কেউ আত্মগোপনেও চলে যান। সরকার পতনের আন্দোলনে দলটি ধারাবাহিকভাবে অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি দিয়ে এলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের রাজপথে দেখা যায়নি গত এক মাসে। বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকা ও ঢাকার বাইরেই মূলত এসব কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।

গত এক মাস ধরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সড়কে ও ভার্চুয়ালি সরব আছেন। এরপর গত দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীও অবরোধ ও হরতালের সমর্থনে ঢাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করছেন। তারা ছাড়া অন্য কোনও কেন্দ্রীয় নেতাকে এতদিন যায়নি। তবে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাকে বিভিন্ন আয়োজনে দেখা গেছে।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস

এদিন (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আয়োজনে জাতীয় সংলাপ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় উপস্থিত হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। একই দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে যেসব বিএনপি নেতাকর্মীকে ফরমায়েশি রায়ে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যদের আয়োজনে প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত হন আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। একই আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস।

বিএনপির বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ২৮ অক্টোবরের পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই কেন্দ্রীয় নেতারা আত্মগোপনে আছেন।

এদিকে নিষ্ক্রিয় নেতাদের মাঠে নামাতে কঠোর হয়েছে দলের হাইকমান্ড। গ্রেফতার এড়িয়ে যার যার এলাকা থেকে নিয়মিত কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রমাণস্বরূপ কর্মসূচির দিনের ছবি ও ভিডিও উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের কাছে পাঠানোরও নির্দেশ রয়েছে। যারা নির্দেশনা পাওয়ার পরও কর্মসূচিতে অনুপস্থিত রয়েছেন এবং কর্মসূচিতে না থেকেও পুরোনো ছবি ও ভিডিও পাঠিয়ে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আলোচনা সভায় উপস্থিত হন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান

এছাড়া অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ বাড়িয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এতে দেখা গেছে, বিগত কয়েকটি অবরোধ কর্মসূচিতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

ঢাকা জেলার একাধিক থানার ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের যোগাযোগ বেড়েছে। নেতাদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা রয়েছে সক্রিয়তা বাড়াতে। এছাড়া আগামীতে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হলে যারা রাজপথে সক্রিয় ছিল তাদেরই বাছাই করা হবে। এর জন্য রাজপথে ছাত্রদলের উপস্থিতি বেড়েছে।

গত ২৩ নভেম্বর অবরোধের সমর্থনে সমাবেশ কর্মসূচিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

তবে উপস্থিতি বাড়লেও রাজপথে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাদের অবস্থান ছিল স্বল্প সময়ের জন্য। অবরোধ সমর্থনে অধিকাংশ নেতা তাদের কর্মীদের নিয়ে পাঁচ ও দশ মিনিটের ঝটিকা মিছিল বের করেন। এ কারণে কোনও কোনও নেতাকর্মী রাজপথে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুপস্থিতির অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলেন, রাজপথে কেন্দ্রীয় নেতারা না থাকায় সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন না তৃণমূল কর্মীরা।

এদিকে মঙ্গলবার প্রায় এক মাস পর কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা সামনে আসায় অনেকেই মনে করছেন, আন্দোলন নিয়ে নতুন কিছু ভাবতে যাচ্ছে বিএনপি।

গত ২৩ নভেম্বর ভোরে অবরোধের সমর্থনে মিছিলে দেখা যায় ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীকে

এ বিষয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। ৩০ নভেম্বরের পর বোঝা যাবে।’

এর আগে মানববন্ধনে সরকার ষড়যন্ত্রের খেলা খেলছে অভিযোগ করে সেলিমা রহমান বলেন, আমার কাছে একটু আগে আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর মেসেজ পাঠিয়েছেন। (শাহজাহান ওমর) বলেছেন, তিনি এবং তার পরিবার সরকারের চাপে রয়েছে। সরকারের কিংস পার্টি, বিএনএম পার্টি হয়েছে, সেখানে যোগদান করার জন্য তার পরিবারের ওপর এবং কারাগারে তাকে ভীষণভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা কেউ রাজি হচ্ছেন না।