কোটা আন্দোলনে সহিংসতা  

বিএনপির ডজনের বেশি কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতার, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিরোধী অনেক নেতা

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) থেকে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) পর্যন্ত বিএনপির ডজনের বেশি কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে দলটির স্থায়ী কমিটির দুই জন সদস্যসহ ঢাকা মহানগরের শীর্ষ নেতারাও রয়েছেন। সব মিলিয়ে সারা দেশ থেকে অন্তত সহস্রাধিক নেতাকর্মী আটক হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে সহিংস করে তোলার পেছনে বিএনপির উসকানি রয়েছে এবং গত কয়েকদিনের সহিংসতায় জড়িতদের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের যোগাযোগ রয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) মধ্যরাতে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে প্রথম গ্রেফতার হন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পরদিন শুক্রবার (১৯ জুলাই) জাতীয় ঐক্য সমাবেশ ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সে রাতে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, ‘অসংখ্য শহীদের রক্তে সেই সমঝোতার পথ সরকার নিজেই রুদ্ধ করে দিয়েছে। ক্ষমতার অপপ্রয়োগকারী শাসক গোষ্ঠীর সামনে এখন ব্যর্থতা ও খুনের দায়ে পদত্যাগের কোনও বিকল্প নেই।’

এর আগে শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকালে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব জানান, বিকালে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হবে। সেই বৈঠকের পরই সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

জাতীয় ঐক্যের সমাবেশ ঘোষণা করলেও বিএনপি সে সমাবেশ করতে পারেনি। শুক্রবার (১৯ জুলাই)  সকাল থেকেই প্রেসক্লাব, পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কমপ্লিট শাটডাউনের মধ্যে দুপুর ১২টার দিকে গণতন্ত্র মঞ্চ বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রেসক্লাব পর্যন্ত মিছিল করতে সক্ষম হলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা ওই এলাকায় জড়ো হতে পারেনি। পরে জুমার নামাজের পর পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

গ্রেফতার বিএনপির ডজনের বেশি কেন্দ্রীয় নেতা, বাসায় তল্লাশি

মঙ্গলবার রাতে শায়রুল কবির খান জানান, গত শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সারা দেশে সহস্রাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সঠিক হিসাব এখনও করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।

এ পর্যন্ত বিএনপির গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ঢাকা জেলা সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব, সদস্য সচিব আমিনুল হক, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রশিদুজ্জামান মিল্লাতসহ অনেকে।

এছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা আটক হয়েছেন বলেও জানান শায়রুল কবির।

গত ১৭ জুলাই মধ্য রাতে ডিবির অভিযানের পর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় বন্ধ থাকায় গ্রেফতারকৃতদের সঠিক হিসাব বের করার সুযোগ নেই বলে বিএনপির একজন নেতা জানান। 

শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার বাসায় তল্লাশি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিবুন নবী খান সোহেল, তাহমিনা লুনা রুশদির বাসা রয়েছে।

পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বিরোধী দলের নেতারা, গ্রেফতার নুর ও হুদা

শায়রুল কবির খান জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি যুগপতে যুক্ত কয়েকটি দলের নেতারা আটক হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও ১২ দলীয় জোটের নেতা এহসানুল হুদা।

বিভিন্ন দলের নেতা ও ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার মামলায় গ্রেফতার হতে পারেন বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতা। এর মধ্যে কয়েকজন আলোচিত নেতা গোয়েন্দাদের নজরদারিতেও রয়েছেন।

সোমবার (২২ জুলাই ) ও মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাষ্ট্রীয় একাধিক গোয়েন্দা বাহিনী সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, বিএনপির সঙ্গে যুগপত আন্দোলনে যুক্ত কয়েকটি দলের সিনিয়র নেতাদের আন্দোলনে সহিংসতার পেছনে যোগাযোগ পাওয়া গেছে। এ কারণে এসব দলের নেতাদের আটক করা হবে।