কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ বিমানে লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ বিমান এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে আগামী ৫ মে (সোমবার) বাংলাদেশে আসবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
শনিবার (৩ মে) গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মির্জা ফখরুল।
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার সময়সূচি চূড়ান্ত হওয়ার পর তা জানানো হবে বলেও জানান বিএনপির মহাসচিব।
তিনি জানান, বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার দুই পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান ও শর্মিলা রহমানও আসবেন।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ম্যাডাম খালেদা জিয়া লন্ডনে চার মাস চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রথমে যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় ধারাবাহিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। প্রতিদিন তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। একদিকে একটি ভালো পরিবেশ, বিশেষ করে পারিবারিক পরিবেশ, একইসঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে উন্নত চিকিৎসার কারণে তিনি আল্লাহর অশেষ রহমতে আগের চাইতে অনেক সুস্থ বোধ করছেন। সে কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এখন দেশে ফিরে আসবেন।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি আগামী ৫ তারিখে (৫ মে) বেগম খালেদা জিয়া একটি বিশেষ বিমানে, আমরা যেটা আশা করছিলাম যে বিমানে তিনি গেছেন; অর্থাৎ কাতারের রয়েল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশে ফিরে আসবেন। সময়টা আমরা নিশ্চিত করে বলতে দিতে পারছি না। কারণ এই সময়টা নির্ভর করবে বিভিন্ন দেশের ওপর। এটা আমরা যখনই নিশ্চিত হবো, আবার গণমাধ্যমের মাধ্যমে সে তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেবো।
নেতাকর্মী ও দেশের সাধারণ মানুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের নেত্রী দেশে ফিরে আসবেন। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মধ্যে আবেগ আছে। প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষ অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত-উজ্জীবিত যে তাদের প্রিয় নেত্রী দেশে ফিরে আসবেন। তাকে অভ্যর্থনা জানানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। শুধু বিএনপি নয়, সারা দেশের মানুষ তাকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুত হয়ে আছে। দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে, তারা যেন অত্যন্ত শৃঙ্খলা সহকারে রাস্তার দুই ধারে কোনও যানজট সৃষ্টি না করে এই মহান নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। আমরা পরামর্শ দিয়েছি এক হাতে জাতীয় পতাকা, আরেক হাতে দলীয় পতাকা নিয়ে আমরা তাকে অভ্যর্থনা জানাবো। জনগণের কাছে আহ্বান থাকবে, তিনি আসার পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পথটিতে যেন তারা যাওয়ার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ বিমানবন্দর থেকে কাকলী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যেন তারা অবস্থান নেন, নিচের সড়ক বাদ দিয়ে। আমার বিশ্বাস জনগণ আমাদের সহযোগিতা করবেন এবং তাদের নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন।
বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এশিয়া মহাদেশের নারী নেত্রীদের মধ্যে যে দুই-একজন সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন গণতন্ত্রের জন্য এবং সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন, কারা নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি কখনোই অন্যায়ের কাছে, বিশেষ করে ফ্যাসিবাদের কাছে মাথা নত করেননি। ১৯৭১ সালে তার স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন স্বাধীনতার ঘোষণা করেন তখন তার দুই শিশুপুত্রের হাত ধরে ঢাকায় চলে এসেছিলেন। ঢাকায় এসেই তিনি পাক সেনাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। দীর্ঘ নয় মাস পাক সেনানিবাসে বন্দি ছিলেন। এই মহীয়সী, অকুতোভয় নেত্রী যিনি স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কখনোই আপোষ করেননি, যিনি গণতন্ত্রের প্রশ্নে কখনোই আপোষ করেননি। সেই নেত্রীকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠালে অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় বাংলাদেশে চিকিৎসা করেন। পরবর্তীকালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তিনি যুক্তরাজ্যে গিয়ে চিকিৎসা নেন।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, তার মতো এমন ত্যাগ স্বীকার করা নারী নেত্রী চোখে পড়েনি। তিনি আমাদের কাছে শুধু প্রিয়ই নন, তিনি আমাদের বড় সম্পদ। দেশের মানুষের কাছে তাদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আমাদের আলোকবর্তিকা। যাকে সামনে রেখে আমরা সব সময় লড়াই সংগ্রাম করি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমিনুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার, নিরাপত্তা সমন্বয়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম সামছুল রহমানসহ অঙ্গ সংগঠন নেতারা।
উল্লেখ্য, গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন যান খালেদা জিয়া। পৌঁছেই লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন তিনি। টানা ১৭ দিন লন্ডন ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে ২৫ জানুয়ারি থেকে তারেক রহমানের বাসায় তাদের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া। অর্ধযুগের বেশি সময় পরে এবারই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।