ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা অনেকের পছন্দ হয়নি: মির্জা ফখরুল

‘ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা অনেকের পছন্দ হয়নি। কারণ নির্বাচন হলেই তাদের বিপদ’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় ভিন্নমত পোষণ করে জামায়াতে ইসলামী ও ন্যাশনাল রিপাবলিক পার্টির প্রতিক্রিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে বুধবার (১৮ জুন) মহানগর উত্তরের অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম ডিসেম্বরে নির্বাচনে যেতে হবে। আর ইউনূস (মুহাম্মদ ইউনুস) সাহেব বলেছিলেন এপ্রিলে ইলেকশন দেবেন, তাই না। তিনি (তারেক রহমান) আলোচনার মধ্যে গিয়ে ওই ডিসেম্বরে থাকেননি। তিনি কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে চলে গেছেন এবং ইউনূস সাহেবও পিছিয়ে ফেব্রুয়ারিতে এসেছেন। এটাকেই বলে রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতা।’

‘রাষ্ট্রনায়ক জনগণের শান্তির কথা চিন্তা করেন। কোনও বিভেদ-বিভাজনে না গিয়ে, কোনও সংঘর্ষে না গিয়ে—এই দুই নেতা (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান) আমাদের একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের সুযোগ করে দিয়েছেন। এটা অনেকের পছন্দ হয়নি। কারণ নির্বাচনে হলেই তাদের বিপদ।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন নির্বাচন নেই। সুতরাং তাদের অনেক গুরুত্ব আছে। যেই নির্বাচন হয়ে যাবে, জনগণের যারা ভালোবাসার দল, তারাই তো ক্ষমতায় আসবে, তাই না! তখন তাদের গুরুত্ব কতটুকু থাকবে কী থাকবে না, তখনই নির্ধারিত হবে।’

‘যে কারণে ওরা নারাজ হয়েছে এবং নারাজ হয়ে গতকালকে (মঙ্গলবার) একটা বৈঠকে ওরা হাজির হয়নি।’

ফখরুল বলেন, আমরা কি এটা (ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন) পছন্দ করছি, না অপছন্দ করছি, জোরে বলেন।’ নেতাকর্মীদের কাছে জানতে চাইলে সমস্বরে তারা বলেন ‘পছন্দ করছি’। এ সময় বিএনপি মহাসচিব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘একটা হাতের তালি দিয়ে অভিনন্দন জানাতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান। সঙ্গে সঙ্গে করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে সভাস্থল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার কাছে আমরা একটা জিনিসই শিখেছি, সেটা হচ্ছে—ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। আমাদের নেত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ওই একই শিক্ষা দিয়েছেন।’

‘এখন আমাদের তরুণ নেতা, যিনি আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সফল হয়েছেন এই ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সরাতে। তিনি এখন আমাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন—স্বপ্ন একটা নতুন স্ট্রাকচারে একটা নতুন বাংলাদেশ আমরা তৈরি করবো। এই স্বপ্নটা আমাদের সবাইকে মাথায় রাখতে হবে—আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ চাই, পরিবর্তন চাই। ওই আওয়ামী লীগের আগের মতো দুঃশাসন চাই না। আমরা ওই বিচার ব্যবস্থা চাই না—যেখানে বেআইনিভাবে বিএনপির লোকদের কারাগারে সাজা দেওয়া হবে—১৩ মাস, ১৪ মাস, ২৬ মাস। আমার এখানে অনেক ভাই বসে আছে তাদের সাজা হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের কর্ম ভুলে গেলে চলবে না

ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হচ্ছে সেই দল, যারা নিজেকে ছাড়া আর কিছু বুঝেনি। ওরা দেশকে ধ্বংস করেছে। আমি শুধু আওয়ামী লীগের কথাগুলো আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। কেন জানেন? ওদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করতে করতে, ওদের শয়তানিগুলো বুঝে ফেলেছি আমরা।

‘ওরা যে হাজার হাজার ছেলেমেয়েকে হত্যা করেছে, প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে, গুম করেছে, লুট করেছে, বাড়ি দখল করেছে, দোকান দখল করেছে—ওই কথাগুলো আমরা ভুলে যাচ্ছি। ওটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমি বারবার এই কথাগুলো বলি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দল, আমাদের কাজ কী? জনগণের কাজ করা। আমাদের কাজ হচ্ছে জনগণ যেন শান্তিতে থাকে। তাদের ছেলেমেয়েরা যেন লেখাপড়া করতে পারে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যেন তারা চিকিৎসা পায়, পাস করে বেরোলে যেন চাকরি পায়—একটা উন্নত জীবনযাপন করতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’

জনগণের কাজ করার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা কর্মসূচিও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

বুধবার রাজধানীর উত্তরায় মহানগর উত্তরে বিএনপির সদস্য নবায়ন ও প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচি উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।

আওয়ামী লীগ নেই, মাঠ ফাঁকা নয়

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমাদের সামনে এখন বিরাট কাজ। আমরা মনে করছি আওয়ামী লীগ নেই, সুতরাং মাঠ ফাঁকা। আসলে মাঠ ফাঁকা না। মাঠের মধ্যে সব মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। ওই মানুষেরা বিবেচনা করে দেখবে, আমাদের কোন দল, কোন মানুষগুলো ভালো। ’৯১ সালে নির্বাচন করছিলাম মনে আছে। ৯১ সালে বিএনপি খুব ছোট দল ছিল, বিএনপি তখন নির্বাচনে জিতবে কী জিতবে না, সেটা নিয়েও কথাবার্তা ছিল। ওই সময়ে কলকাতা এয়ারপোর্টে হাসিনাকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করেন—নির্বাচনে বিএনপি কয়টা আসন পাবে। হাসিনা বললেন, ‘কয়টা আর বিএনপি পাবে, বেশি হলে ১০টা।’ কিন্তু ওই নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করেছিল। কারণ বিএনপি জনগণের কাছ থেকে সেই ভালোবাসা পেয়েছিল। সেই ভালোবাসা আপনাদের অর্জন করতে হবে।’

আওয়ামী লীগকে নেওয়া যাবে না

বিএনপির নেতাকর্মীদের সতর্ক করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যে সদস্য নবায়ন করা হচ্ছে, সেখানে যেন কোনও আওয়ামী লীগ না থাকে। কারণ এটা পরীক্ষিত, আওয়ামী লীগের কেউই ভালো না। আওয়ামী লীগ নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কারও স্বার্থ দেখতে পারে না।’

‘তাই তাদের কাউকে দলে নেওয়া যাবে না। তবে নিরপেক্ষ কেউ থাকলে তাকে অবশ্যই দলে আসার জন্য আহ্বান জানানো হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ নেবো না, কিন্তু যারা ভালো মানুষ তাদের বাদও দেবো না।’

‘আওয়ামী লীগের যারা প্রমাণিত খারাপ মানুষ, মাফিয়া, দখলদার, ডাকাত, তাদের দলে নেওয়া যাবে না। তবে যারা রাজনীতি করেনি, খারাপ না, ভালো মানুষ, তাদের বাছাই করে দলে নিতে হবে।’

তুরাগ থানা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হারুন রশিদ খোকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এসএস জাহাঙ্গীর, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এম কফিল উদ্দিন, আফাজ উদ্দিন, এবিএম আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।