বিগত সময়ে আন্দোলনে যুক্ত যুগপৎসঙ্গী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়া শুরু করেছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয়পক্ষ আবারও ঘনিষ্ঠতা অর্জনের পথে পা বাড়িয়েছে।
অনেক দিন পর রবিবার (২২ জুন) গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য আলোচনা করেছেন। বৈঠকে গত ১৩ জুন অনুষ্ঠিত ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠকের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে যুগপৎসঙ্গীদের। ধারাবাহিকভাবে সোমবারও (২৩ জুন) একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি।
বৈঠকে অংশ নেওয়া দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, রবিবারের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। ওয়ান টু ওয়ান আন্তরিক আলোচনা হয়েছে।
দেড় ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু লন্ডন বৈঠকের বিষয়ে কথা বলেন। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, এ বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যা বিএনপি আশা করে।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা উল্লেখ করেন, বিএনপি ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা বোঝাপড়া বাড়াতে চায়। সরকার গঠন, নির্বাচনে যুগপৎসঙ্গীদের নিয়েই এগোতে চায় বিএনপি।
‘তবে এর রুট কী হবে, কোন প্রক্রিয়ায় হবে, সেটি নিয়ে আগে বিএনপিতে আলোচনা হবে, তারপর আমাদের জানাবে’- বলছিলেন মঞ্চের একজন নেতা।
বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, যুগপৎসঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনা শুরুর লক্ষ্য সবাইকে ইতিবাচক রাখা এবং ১৩ জুন অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়ে তারেক রহমানকে অভিনন্দন জানানো। দুই নেতার বৈঠককে স্বাগত জানিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমে অংশ হিসেবে শরিক দলগুলোকে সামনের লক্ষ্য অর্জনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার (২২ জুন) রাতে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘লন্ডন বৈঠকের বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরাও বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছি। সংস্কার, ভবিষ্যৎ নির্বাচন এসব নিয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অনেক দিন আমাদের কোনও কথা হয়নি। সেদিক থেকে এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে খানিক মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব কাটানো গেছে বলে মনে করি। সামনে আরও সমঝোতা, বোঝাপড়া বাড়বে আশা করি।’
বৈঠকে সংস্কার ইস্যুতেও আলাপ হয়েছে বলে জানান সাইফুল হক। তিনি উল্লেখ করেন, ‘কীভাবে আমরা আরও বেশি ঐকমত্যে আসতে পারি, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মঞ্চের আরেক নেতা, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘লন্ডনে যা হলো তা আমাদের জানালো আর কী, এই।’
বৈঠকের রাজনৈতিক বার্তা কী, জবাবে মান্না বলেন, ‘ওগুলো তারা আলোচনা করতে চায়নি। আমরাও আগ্রহ দেখাইনি। একান্তে বৈঠকের বিষয়ে কিছু জানি না।’
সোমবার লিয়াজোঁ কমিটি বৈঠকে অংশ নেয় গণফোরাম। এতে দলের সভাপতি পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও এসএম আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি প্রধান ও স্থায়ী কমিটি সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বৈঠক থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘আমরা যারা যুগপতে একসঙ্গে ছিলাম, সেই ধারা এখনও অব্যাহত আছে। সামনের দিনেও থাকবে। আমরা গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবো। ৩১ দফার ভিত্তিতে যে সংস্কার প্রস্তাব, তা আমরা সবাই মিলে বাস্তবায়ন করবো।’
আমির খসরু আরও উল্লেখ করেন, ‘লন্ডন বৈঠকের পর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের বিষয়টি তারা অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। জনগণের মধ্যে যে আশঙ্কা আছে, তা কেটে গেছে। নির্বাচনি টানেলে প্রবেশ করেছে সবাই।’
গণতন্ত্র মঞ্চের একজন নেতা জানান, বিএনপি সরকার গঠন করলেও একলা চলো নীতিতে বেশি দিন চলতে সক্ষম নয়। সরকার গঠন হলে বিএনপির পরিবর্তন আসবে।
এদিন ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বাধীন এনডিএমের সঙ্গেও বৈঠক করে বিএনপি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ধারাবাহিকভাবে যুগপতের অন্যান্য দলের সঙ্গেও বৈঠক হবে। সেগুলোর দিনক্ষণ নির্ধারণ হলে তিনি জানাতে পারবেন।
জানতে চাইলে ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ১২ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো বিগত সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি। বিএনপির সঙ্গে, বিএনপির নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন, সংগ্রাম ও সুখে-দুখে রয়েছি। ইতোমধ্যে কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আশা করি আমাদের সঙ্গেও দ্রুত বৈঠক হবে।’
বাংলাদেশ এলডিপির সভাপতি আরও উল্লেখ করেন, ‘বৈঠকে বিএনপি কী বলে আমরা শুনবো। যদিও আমাদের বা জোটগত প্রত্যাশা রয়েছে। আমরা আশা করি রাজপথে সক্রিয়দের বিএনপি সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করবে। আমাদের দলসহ জোটের নেতারা নির্বাচনি এলাকায় কাজ করছেন, আমি নিজেও প্রচুর সময় দিচ্ছি। জনগণের পাশে থেকেছি, থাকছি। বিশ্বাস রাখি বিএনপি ইতিবাচকভাবে সবাইকে মূল্যায়ন করবে।’