নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব জামায়াতের

জামায়াতে ইসলামী

নতুনভাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের পরপরই জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ বা নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা তৈরির আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি তিনি এ আহ্বান জানান।

জামায়াতের আমির বলেন, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের করতে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ ইসি গঠনই যথেষ্ট নয়। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জাতিকে উপহার দিতে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের প্রয়োজন। এজন্য ইসি পুনর্গঠনের পরপর নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ বা নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা তৈরি করতে হবে।

জামায়াতের প্রস্তাব অনুযায়ী, সংবিধানের ১১৮-১২৬ নং অনুচ্ছেদের আলোকে নিরপেক্ষ, যোগ্য ও দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি সিলেকশন কমিটি গঠন করা আবশ্যক।  এ কমিটিতে দুজন দক্ষ নারী সদস্য নিয়োগের প্রস্তাব করেছে তারা। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনার রাখা হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯ ডিসেম্বর জামায়াতের আমির মকবুল সংলাপের সুযোগ চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে একটি চিঠি দেন। চিঠি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন, তারা ১৯ ডিসেম্বরই জামায়াতের চিঠি পেয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধন স্থগিত থাকায় দলটিকে ডাকা হয়নি। 

ওই চিঠিতে বলা হয় বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ ইসি গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসি গঠনে সার্চ কমিটি নির্ধারণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে আপনি সংলাপের যে মহান উদ্যোগ নিয়েছেন, জামায়াত তাকে স্বাগত জানায়। একইসঙ্গে আন্তরিকভাবে সফলতাও কামনা করে।’

নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনই যথেষ্ট নয়..

জামায়াতের আমির বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনই যথেষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক প্রশাসনিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা প্রদান এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

এ কারণেই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন যাতে একটি সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারে সেজন্য নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের প্রয়োজন বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, নতুনভাবে নির্বাচন কমিশন গঠনের পরপরই জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার বা নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা তৈরি করতে হবে।

জামায়াতের প্রস্তাবনা

জামায়াতের প্রস্তাবে বলা হয়, বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধানের ১১৮-১২৬ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ, যোগ্য ও দায়িত্ব পালনে প্রশ্নাতীতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি সিলেকশন কমিটি গঠন করা আবশ্যক মনে করে জামায়াত।

এ সিলেকশন কমিটি নিরপেক্ষ লোকদের মাধ্যমে ৭ সদস্যের একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চারজন নির্বাচন কমিশনার ও দুইজন নারী  নির্বাচন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।

নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তাদের অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সার্বিক সহায়তা দিতে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার বা নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকার গঠনের দাবিও জানানো হয় দলটির প্রস্তাবে।

জামায়াত প্রস্তাব করে, জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন প্রত্যেক রাজনৈতিক দল এবং প্রতিষ্ঠিত সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করা এবং ঐকমত্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক সংলাপ অব্যাহত রাখতে হবে।

/এসটিএস/এসটি/টিএন/