বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী। ঢাকায় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও মহানগর কার্যালয় দুটোই একদশক ধরে বন্ধ। এর মধ্যে একটিতে আগাছা জমে আছে। বর্তমানে জামায়াতের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে অস্থায়ীভাবে। নেতাদের অনুসারীর বাসা কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে দলটি।
গত ১৪ অক্টোবর সরেজমিনে দেখা গেছে, বড় মগবাজারের এলিফ্যান্ট রোডে ৫০৫ ভবনের নিচতলায় অবস্থান করছেন কয়েকজন পাহারাদার। শীতলপাটিতে শুয়ে-বসে এখানে প্রতিদিন পালাক্রমে ডিউটি করে ছয় নিরাপত্তাকর্মী। তাদের মধ্যে একজন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ভবনটির মূল মালিকানা জামায়াতের দারুল ইসলাম ট্রাস্টের। ২০১১ সালে বন্ধের পর থেকে দলের কোনও নেতা অফিসে আসেননি। তবে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তল্লাশি করেছে।
নিরাপত্তারক্ষী মো. ইব্রাহিম উল্লেখ করেন, তারা প্রত্যেকে দলীয় আদর্শের কর্মী। তিনি বলেন, ‘দল থেকে বেতন-ভাতা ঠিকমতো পাচ্ছি। জীবন চলে যাচ্ছে।’
একইদিন দুপুরে জামায়াতের মহানগর কার্যালয়ে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ভেতর থেকে বন্ধ রাখা ফটকে দফায়-দফায় টোকা দেওয়া হলেও কেউ সাড়া দেয়নি। প্রবেশপথে লতিয়ে ওঠা আগাছা চোখে পড়ার মতো। ফটকের সামনে জমে আছে পানি। অফিসটি ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তালাবদ্ধ। এরপর আর এখানে দলের কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি।
৯ তলা ভবনটির অষ্টম ও নবম তলায় থাকে নিরাপত্তাকর্মীরা। অন্য ফ্লোরগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন পাশের ভবনের একজন।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর কার্যালয়ের সামনে একটি নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে। সেখানে কর্মরত একজন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ১০ বছর আগে জামায়াতের অফিস বন্ধের শুরুর দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে তল্লাশি করতো। তবে গত কয়েক বছরে আর এমন দৃশ্য চোখে পড়েনি তার।
গত ১৬ অক্টোবর জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের একজন নেতা মোবাইল ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলীয় কার্যালয় বন্ধ থাকায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কিছু অফিস দায়িত্বশীল নেতাদের বাসাকেন্দ্রিক। এছাড়া বাইরে রেস্তোরাঁয় দলীয় বৈঠক হয়ে থাকে। তবে করোনা অতিমারি শুরুর পর থেকে অনলাইন মাধ্যমেই আমাদের কাজ বেশি হয়।’
দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের বক্তব্য, ‘নানান কারণে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর অফিস তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এখন অফিসে বসা যাচ্ছে না। যাওয়াও যাচ্ছে না।’
সরকারবিরোধী কর্মসূচির অংশ হিসেবে নাশকতা করায় ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জামায়াতের দুটি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই থেকে মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকায় কেন্দ্রীয় ও পুরানা পল্টনের মহানগর কার্যালয় বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ২০ দলীয় জোটে বিতর্কিত দল জামায়াতে ইসলামীর থাকা নিয়ে বিএনপিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাদের সঙ্গে জোটগত সম্পর্ক ছেড়ে আসতে ২০১৮ সালের আগস্টে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে পরামর্শ দেয় বিএনপির তৃণমূল। এর প্রায় দুই বছর পর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দলটির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের পক্ষে অভিমত দেন দলের স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য।
আরও পড়ুন-
নেতা কানাডায়, রাজনৈতিক কার্যালয়ে বেসরকারি শিক্ষক সমিতির অফিস
২০ দলীয় জোট: নেতা এলে অফিস খোলে
২০ দলীয় জোট: এক ভবনেই তিন শরিক দলের অফিস
‘একদল-একনেতা’ ও ‘অনিবন্ধিত’দের ২০ দলীয় জোট, অনেকের অফিসও নেই