বিএনপির পথেই জাপা: সার্চ কমিটির সদস্যদের নাম প্রকাশে ‘না’

জাতীয় পার্টিনির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) বিকালে বঙ্গভবনে যাচ্ছে সংসদের বিরোধী দল ও মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে প্রায় ১৮জনের একটি প্রতিনিধি দল এই সংলাপে অংশ নেবে। বৈঠকে রাষ্ট্রপতিকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ও সার্চ কমিটিতে মনোনয়নের জন্য ৫-৬জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নামের একটি তালিকা দেবে দলটি। এক্ষেত্রে বিএনপির পথেই হাঁটছে জাপা। আর প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় প্রকাশেও জাপা কঠোর গোপনীয়তা মেনে চলছে। দলটির শীর্ষ তিন নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জাপার কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তারা সার্চ কমিটিতে মনোনয়নের জন্য  ৫-৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নামের একটি তালিকা দেবেন রাষ্ট্রপতিকে। তারা জানান, এদিনে সকালে তারা বাছাই কমিটির জন্য নামের তালিকা চূড়ান্ত করবেন। ইতোমধ্যেই প্রায় ৫-৬ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকাও তারা করেছেন।

জানতে চাইলে জিএম কাদের সোমবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটিতে স্বাধীন, নিরপেক্ষ, সাহসী ও স্বচ্ছ ব্যক্তিদের দেখতে চাই। এক্ষেত্রে যে নামগুলো প্রস্তাব করব, সেগুলো রাষ্ট্রপতিকে দেওয়ার আগে গোপন রাখতে চাই। তবে রাষ্ট্রপতি চাইলেই নাম দেব আমরা।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপিও নামের তালিকা প্রকাশ করেনি। এটা ঠিকও হবে না। নাম প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিব্রতবোধ করবেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতি নাম চাইলে দেব, না চাইলে তো দেব না। কিছু নামের তালিকা জাপা চেয়ারম্যান করেছেন, আমরাও তাকে কিছু নাম দিয়েছি, বাকিটা তিনিই চূড়ান্ত করবেন।’

গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, ‘নাম না চাইলে এরশাদের ২৬ নভেম্বরের দেওয়া প্রস্তাবটিই সংক্ষিপ্ত আকারে রাষ্ট্রপতিকে দেব আমরা। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির কোনও কোয়ারি থাকলে, তাও  জমা দেব।’

জাপা মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাছাই কমিটিতে নাম দিতে আমরা মঙ্গলবার সকালে বসব। কিছু নাম আমাদের হাতে আছে। এগুলো দলের চেয়ারম্যান চূড়ান্ত করবেন।’

২০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকাল ৩ টায় বঙ্গভবনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপে বসবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ইতোমধ্যে দলটি ১৮ জনের তালিকা জমা দিয়েছে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। এরশাদের নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নেবেন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। তার রাজনৈতিক সচিব ফখরুল ইমাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রওশন এরশাদের শরীর ভালো থাকলে অবশ্যই যাবেন। এখন পর্যন্ত এটাই ঠিক। তবে তার শরীরের সোডিয়াম কমে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

জাপার একাধিক নেতা জানান, তারা রাষ্ট্রপতিকে স্বচ্ছ-স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আহ্বান জানাবেন। এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ও সজ্জন ব্যক্তিদের দিয়ে সার্চ কমিটি করতে রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানাবেন তারা।

জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রশাসনের দিক দিয়ে, আইনের দিক দিয়ে যারা স্বাধীন হবেন, তারাই হতে পারেন, এমন পরামর্শ থাকবে আমাদের।’  তিনি আরও বলেন, ‘যাদের চয়েজ করা হবে, তারা যেন যথোপযুক্ত হন, নিউট্রাল ও ম্যান অব কারেক্টর হন।’ তবে জাতীয় পার্টি নির্বাচন কমিশনে কারা থাকবেন, এ নিয়ে কোনও তালিকা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও  সিদ্ধান্ত নেয়নি।

জাপার মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার এমপি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন যেন রাষ্ট্রপতি জাতিকে উপহার দিতে পারেন, এ জন্য তাকে অনুরোধ করব।’ তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাব থাকবে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্যান্য কমিশনার যেন সমালোচনার উর্ধ্বে থাকেন।  তারা  যেন কোনও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকেন। তারা সবার জন্য হবেন, কোনও একটি দলের জন্য নয়। নির্বাচনের আগেই সবার কাছে সমাদৃত হবেন, এমন ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিতেই অনুরোধ করব।’

এর আগে ১৮ ডিসেম্বর রবিবার বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসি ইস্যুতে আলোচনা করে এসেছে। সংলাপ শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘তিনটি মূল প্রস্তাব ছিল আমাদের আলোচনায়। একটি হচ্ছে বাছাই কমিটি গঠন, তা হতে হবে নিরপেক্ষ ও সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশনে যারা থাকবেন, তারাও যেন নিরপেক্ষ থাকেন। তৃতীয়ত, আরপিও সংশোধনের বিষয়টি। শক্তিশালী ইসি গঠন করতে হবে, সেটিও আলোচনায় ছিল।’

এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করার ব্যাপারে খসরা তৈরির কাজ চলছে বলে ১৮ ডিসেম্বর জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। আইন করার বিষয়ে মত দিয়েছিলেন এরশাদও। ২৬ নভেম্বরের প্রস্তাবেই তিনি জোর দিয়েছেন আইনের বিষয়ে। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশন নিয়োগ সংক্রান্ত একটি আইনি কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখার বিধান রাখতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার সিনিয়র নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংলাপ তো আইন করার জন্য। আইনে কী থাকবে, কী ধরনের পরিস্থিতি, কিভাবে সিলেকশন হবে, সার্চ কমিটি কিভাবে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নিয়ম আছে। কমিশনারদের কী কী গুণ থাকতে হবে, একাডেমিক যোগ্যতা কী হবে, বয়স কত হতে পারে, মিনিমাম কত হবে, ম্যাক্সিমাম কী হবে—এসব বিষয়ই আইনের আলোচনা হবে।’  এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

উল্লেখ্য, গত ১৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া। এরপর ২৬ নভেম্বর জাপা চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও ইসি গঠনে প্রস্তাব দেন। তার প্রস্তাবে ইসি গঠনে আইন করারও দাবি ছিল।

এরপর গত ১২ ডিসেম্বর বিএনপিসহ ৫টি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে আলোচনার জন্য বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এই সংলাপ শুরু হয় ১৮ ডিসেম্বর রবিবার। এরপর ২০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার জাতীয় পার্টির সঙ্গে বসছেন রাষ্ট্রপতি। এরই ধারাবাহিকতায় ২১ ডিসেম্বর এলডিপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও ২২ ডিসেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) (ইনু) সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি।

 আরও পড়ুন:

/এমএনএইচ/