আমি ঘর ছাড়িনি, ঘর আমাকে ছেড়েছে: ফিরোজ রশীদ

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে নিজে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দাবি করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে এই দল (আওয়ামী লীগ) আমার ছাড়তে হতো না। এখানে (জাতীয় পার্টি) আমার আসতে হতো না। আজকে ৩৬ বছর একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়—আপনি কেন ঘর ছাড়ছেন? বারবার বলি, আমি ঘর ছাড়ি নাই, ঘর আমাকে ছেড়েছে।’

বুধবার (৩১ আগস্ট) জাতীয় সংসদে ১৪৭ বিধির ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ‘পঁচাত্তরের খুনি চক্রান্তকারীদের প্রেতাত্মারা এখনও ক্ষান্ত হয়নি। আজও তারা ঘৃণ্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরে এসে ইতিহাসের ঢাকাকে ঘুরিয়ে দিতে—এমন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সব চক্রান্ত ব্যর্থ করার শপথ নিয়ে জাতীয় সংসদে সাধারণ প্রস্তাব উঠানো হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন, তাহলে আমাকে ওখানে থাকতে হতো। যদি বঙ্গবন্ধুর পরে আমার নেতা শেখ মনিও বেঁচে থাকতেন, আমাকে এখানে আসতে হতো না। এমনকি শেখ কামাল থাকলেও আমাকে এখানে আসতে হতো না। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য।’

তিনি বলেন, ‘আজকে ৩৬ বছর পরে আমাকে বই লিখতে হচ্ছে—ঘর আমি ছাড়ি নাই, ঘর আমাকে ছেড়েছে। সেখানে দেখবেন, কী কথা আমি লিখে গেছি। প্রত্যেকটা কথা সত্য, কোনও মিথ্যা কথা লিখি নাই। আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম, কেউ আমাদের সায় দেয় নাই। নাম বলে কাউকে ছোট করবো না। আমাদের বলেছিল, তোমাদের জীবন নেই।’

খন্দকার মোশতাককে হত্যার জন্য বড় পরিকল্পনা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান চৌধুরীর কাছে গেলাম। বললাম, সব ঠিক আছে, একজন নেতার তো ইয়ে লাগবে। উনি বললেন, এমন কাজ তোমরা করতে যাবে না।’ হয় নাই। সব যুদ্ধে জেতা যায় না। প্রধানমন্ত্রী যে বলেন, ‘এত আওয়ামী লীগ নেতা, সেদিন (১৫ আগস্ট) কাউকে পাওয়া যায় নাই।’ আমরাও কাউকে পাই নাই। না পেয়ে এখানে (বিরোধী দল) বসে আছি। না হলে ওখানে (সরকারি দল) থাকতাম।’’

দুর্ভাগ্য এটাই, এখন অনেক কথা শুনতে হয়, মানতে হয় এবং গ্রহণ করতে হয় বলে দাবি করেন ফিরোজ রশীদ।   

তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবা, মা, ভাইদের হারিয়েছেন। ঠিক তেমনি আমরা যারা ছাত্রলীগ, যুবলীগ করতাম— আমরাও নেতাকে হারিয়ে রাজনীতিতে এতিম হয়ে গিয়েছিলাম।’

সংসদে ভালো পরিবেশ আছে উল্লেখ করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘এখানে যে যত কথা বলতে পারেন, কোনও রিস্ক নাই। বীর বিক্রম, বীর উত্তমের মতো অনেক কথা বলতে পারেন। কার কতটুকু ক্ষমতা আছে, সেটা আমাদের দেখা। কারণ, আমরা এই দেশে আন্দোলন, সংগ্রাম করেছি। বঙ্গবন্ধুর মরার পরে সবার ইতিহাস আমাদের জানা আছে।’

১৯৭৩ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু তাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন উল্লেখ করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘‘তারপর আমাকে ডেকে বললেন, ‘একটা তদবির আছে, রামকৃষ্ণ মিশন থেকে, দিতে হবে। কারণ, তোর এলাকায় ৭০ শতাংশ হিন্দু, ৩০ শতাংশ মুসলমান। সন্তোষ বাবুকে তুই নিয়ে আয়।’ আমি তাকে নিলাম, সন্তোষ বাবুকে মনোনয়ন দেওয়া হলো। এরপর বঙ্গবন্ধু বললেন ‘তোকে আমি বানাবো। কতবার তোকে এমপি হতে হবে। আমি তো আছি।’ কিন্তু বঙ্গবন্ধু তো পঁচাত্তর সালে চলেই গেলেন।’’

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা এলে বাংলাদেশের অধিকাংশ থানা দখলে থাকতো বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু দুর্ভাগ্য, কেউ কিছু বলে নাই। বরং, আমরা বিভ্রান্ত হলাম। যখন দেখলাম, আওয়ামী লীগের বিরাট নেতা খুনি মোশতাকের নেতৃত্বে দলের অনেক নেতা সরকার গঠন করলো, তখন আমরা বিভ্রান্ত হলাম।’