আগুনে হতাহতের ঘটনায় সরকারকে দায়ী করে চুন্নুর ক্ষোভ

রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করে বলেছেন, সরকারের জবাবদিহি করা দরকার। দায়-দায়িত্ব নিয়ে সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

শনিবার (২ মার্চ) জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে মুজিবুল হক এ কথা বলেন। এদিকে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এদিন সংসদের বৈঠকের শুরুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক বলেন, ‘দেশের জনগণ কর দেয় সরকার পরিচালনার জন্য। সরকারের দায়িত্ব নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া। ভবন নির্মাণের জন্য সরকারের ছয়টি সংস্থার ছাড়পত্র লাগে, ছাড়পত্র দেওয়ার পরে ভবনগুলোর নজরদারি নেই।’

মুজিবুল হক বলেন, ‘প্রত্যেকটা এলাকায় রাজউকের কর্মকর্তারা থাকেন। সেই কর্মকর্তারা কোথায়?  এক-একটা ভবন তৈরি করা হয় একটা উদ্দেশ্যে, কিন্তু যায় আরেকটা উদ্দেশ্যে। এই যে মানুষগুলো মারা গেলেঅ জবাব দেবে কে? এর দায়-দায়িত্ব সরকারের, সরকারের সংস্থা, সরকারি অফিসের।’

জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘এক-এক সময় এক- একটা ঘটনা ঘটে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় তদন্ত করা হবে, তদন্ত টিম করা হয়। কিন্তু এরপর কোনও ফলোআপ নেই। এভাবে দেশ চলতে পারে না। সরকারের জবাবদিহি করার দরকার। দায়-দায়িত্ব নিয়ে সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রেস্টুরেন্টের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোড এলাকায় একটা ভবনে ১৫টি রেস্টুরেন্ট। সেগুলোর কোনও অনুমতি নেই। ধানমন্ডির ২৭ নম্বর রোডের রাস্তার পাশে ভবনে কয়েকশ রেস্টুরেন্ট, কিন্তু সেগুলোর অনুমতি নেই। খিলগাঁওয়ের তালতলায় বহুতল ভবনে একই অবস্থা। আরও এরকম ঘটনা ঘটবে। যদি সরকার এ বিষয়ে সচেতন না হয়। সরকারকে বলবো— দায়দায়িত্ব নিয়ে এগুলোর জন্য কারা কারা দায়ী, সেটা রাজউক হোক, ফায়ার ব্রিগেড হোক, পরিবেশ হোক, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়ে— ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, তার ব্যবস্থা করেন।’

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। শেখ হাসিনার হাতে দায়মুক্তির সংস্কৃতি ধ্বংস হয়েছে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মন্তব্য করে সরকারি দলের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘বড় বড় অপরাধীদের বিচার হয়েছে। সেক্ষেত্রে দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় আরও কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

২০১৯ সালে বনানীর এফআর টাওয়ারের আগুনে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। সে সময় গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ছিলেন শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পরে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছিলাম। তদন্ত করে ৬২ জনের বিরুদ্ধে আমরা রিপোর্ট দিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরও সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। তারপর চার্জশিট দেওয়ার সময় অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, আজকে পর্যন্ত সে মামলার অভিযোগ গঠন পর্যন্ত হয়নি।’

শ ম রেজাউল বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে একটি ফ্যাক্টরিতে ৫২ জন লোককে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো (২০২১ সালে)। সে মামলার আসামিরা জেলে গেছে। সে মামলায় আজ পর্যন্ত বিচারকার্যক্রম শুরু হয়নি। এ রকম অনেক ঘটনা।’

তিনি বলেন, ‘এ জায়গায় আমার দাবি— এ জাতীয় অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত, প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন ও স্পেশাল  ট্রাইব্যুনাল করে তাদের বিচার করা না হলে, শুধু এই অপরাধ নয়— অন্যদের কাছে একটা মেসেজ যাবে না। আমরা সে সময় ১৩০০ ভবন চিহ্নিত করেছিলাম গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে। যে মন্ত্রণালয়ের প্ল্যান ঠিক নেই, যে ভবনের অধিকাংশ ফ্লোর অননুমোদিতভাবে করা হয়েছে, সে ভবনগুলো কিন্তু ভাঙা সম্ভব হয়নি। এটাও কিন্তু এক প্রকার দায়মুক্তি দেওয়া।’

এর আগে সংসদের বৈঠকের শুরুতে বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় জাতীয় সংসদে শোক প্রকাশ করা হয়। বৈঠকের শুরুতে স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুর ওই ঘটনায় গভীর শোক এবং নিহতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।