মাহফিল স্থগিত করলেন চরমোনাই পীর

চরমোনাই পীরের মাহফিলের পোস্টার, হাটহাজারী মাদ্রাসার ব্যানার ও দাওয়াতিপত্রবাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জেরে তাফসিরুল মাহফিল স্থগিত করলেন ইসলামী আন্দোলনের আমির, চরমোনাই পীর আল্লামা রেজাউল করীম। এ মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল আগামী ৩০ এপ্রিল ও ১ মে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রহিম মেটাল মসজিদ সংলগ্ন রাস্তায়। ওই মাহফিলের প্রথম দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। ইসলামী আন্দোলনের নেতা মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ইসলামী আন্দোলনের নেতা মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম বাংলা ট্রিবিউনকে বুধবার রাত ১২টার দিকে বলেন, অনলাইন নিউজ পেপার বাংলা ট্রিবিউনে সংবাদ প্রকাশের পর এটি নিয়ে ‘এক ধরনের রাজনীতি’ হচ্ছিল। এ কারণে মাহফিল স্থগিত করা হয়েছে।  তিনি আরও বলেন, বাংলা ট্রিবিউনের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, যে ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে সরকারের সৌহার্দ্য সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বিষয়টির নিন্দা জানাই। এটি রাজনৈতিক কোনও অনুষ্ঠান ছিল না। এটি ছিল দ্বীনের দাওয়াত। তাফসির মাহফিলে দলমত নির্বিশেষে সবাই আসতে পারেন। এ কারণেই এ নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য উপস্থাপিত হওয়ার কারণে মাহফিল স্তগিত করেছি। পরে  হুজুরের নির্দেশে আমরা নতুন তারিখ নির্ধারণ করব।
উল্লেখ্য, ওয়াজ মাহফিলের আয়োজক ছিল ইসলামী আন্দোলনের সহযোগি সংগঠন বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার 'বদলে যাচ্ছেন শফী, পাল্টাচ্ছেন চরমোনাই পীরসরকারের সঙ্গে কওমি আলেমদের সৌহার্দ্য বাড়ছে' শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর কওমি ঘরানার মাদ্রাসা ও ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দিনে দিনে সরকারের সঙ্গে কওমিপন্থী আলেমদের তিক্ততা- দূরত্ব কমছে। কাছাকাছি আসছেন সরকারের মন্ত্রী ও দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কওমি আলেমরা। পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় মন্ত্রীদের দাওয়াত করে মাদ্রাসায় নিয়ে যাচ্ছেন কওমিপন্থী আলেমরা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিভিন্ন কর্মসূচির পর আলেমদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। তবে কেউ কেউ বিষয়টিকে সন্দেহের চোখেই দেখছেন।  যদিও কওমি মাদ্রাসাপন্থীদের নিজস্ব অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রীদের দাওয়াত করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা অতীতে খুব কমই রয়েছে। এ কারণেই হাটহাজারী মাদ্রাসা ও  চরমোনাই পীরের মাহফিলে মন্ত্রীদের দাওয়াত নিয়ে নতুন আগ্রহ তৈরি হয় কওমি ঘরানায়।

গত শনিবার বিকেলে দেশের সবচেয়ে বড় কওমি মাদ্রাসা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। মাদ্রাসার দারুল হাদিস মিলনায়তনে ‘ইসলাম প্রচারে মাতৃভাষার গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে বাংলা ভাষা সাহিত্য বিভাগ। হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আল্লামা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, মন্ত্রী বাংলাভাষার প্রচারে আলেমদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি মাদ্রাসা অঞ্চলের এমপি ও মন্ত্রী। তাই আমরা তাকে দাওয়াত দিয়েছি।

মন্ত্রীকে দাওয়াত দেওয়ায় হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক পোক্ত হচ্ছে— এমন প্রসঙ্গে আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, হেফাজতের সঙ্গে কারও কোনও শত্রুতা নেই। তাই, আমরা তাকে দাওয়াত দিয়েছি।

৩০ এপ্রিল ও ১ মে তেজগাঁওয়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেছেন চরমোনাই পীরের অনুসারীরা। ওই মাহফিলের প্রথম দিন প্রধান অতিথি করা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে। দ্বিতীয় প্রধান অতিথি থাকবেন চরমোনাই পীর, ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

জানা যায়, রাজধানী ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবেদনের ফটোকপিও বিলি হয়। এরপরই ইসলামী আন্দোলনের নীতি-নির্ধারকরা বসে এ মাহফিল স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন।

বুধবার দুপুরে হাটহাজারীর স্থানীয় সাংবাদিক একেএম নিজাম এ প্রতিবেদককে জানান, হাটহাজারীতেও প্রতিবেদনের ফটোকপি বিলি হয়। ওই এলাকার মাদ্রাসাগুলোয় প্রতিবেদনে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

আরও পড়তে পারেন: এক ‘বাবার চিঠি’ পেয়ে পর্নো সাইট বন্ধের উদ্যোগ

এদিকে, নাম প্রকাশে ইসলামী আন্দোলনের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, যতই যা হোক, ইসলামী আন্দোলন নিয়ে কাউকে কোনও রকম অপপ্রচার করতে দেওয়া হবে না। তাই পীর সাহেব চরমোনাইয়ের ওই মাহফিল বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি অনিবার্য কারণে স্থগিত করেছে। আশা করি, এর পর থেকে আর কোনও বিভ্রান্তি থাকবে না।

/এমএনএইচ/