বাংলাদেশ ন্যাপ সক্রিয় ঢাকা ও নীলফামারীতে

পর্ব ৩ কাভার গ্রাফিকসমজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ)। বিভিন্ন সময় ভাঙনের শিকার এই দলটি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে আছে। দলটি ঢাকা ও নীলফামারী জেলায় অনেক বেশি সক্রিয় হলেও দেশের বাকি জেলাগুলোতে তাদের কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো নয়।

মওলানা ভাসানী ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গঠন করেন পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। এরপর ১৯৬৭ সালে চীনপন্থী ও মস্কোপন্থী মতবাদে বিভক্ত হয় ন্যাপ। পরে আরও কয়েকবার ভাঙনের কবলে পড়ে দলটি। সবক’টি অংশই ন্যাপ নামটি ধারণ করে। বর্তমানে ন্যাপ নামে আরেকটি অংশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে রয়েছে।

ন্যাপ ছবি ৪

দলটির নেতৃত্বে আছেন জেবেল রহমান গাণি। তিনি এরশাদ সরকারের প্রতিমন্ত্রী শফিকুল গাণি স্বপনের ছেলে ও জিয়াউর রহমানের মন্ত্রী বিশিষ্ট রাজনীতিক মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নাতি। যাদু মিয়া, তার ছেলে শফিকুল গাণিও ভাসানী ন্যাপ করতেন। বলা যায়, জেবেল রহমান উত্তরাধিকার সূত্রেই ন্যাপের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। মশিউর রহমান যাদু মিয়ার বাড়ি নীলফামারীতে। এই জেলায় এখনও যাদু মিয়ার পরিবারের প্রভাব রয়েছে। মূলত সে কারণেই  নীলফামারীতে এখনও ন্যাপের কর্মকাণ্ড দেখা যায়।

ন্যাপন্যাপের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কার্যক্রম চলছে রাজধানীর নয়াপল্টনে ভাড়া করা একটি ফ্ল্যাটে। এছাড়া বারিধারায় রয়েছে চেয়ারম্যানের কার্যালয়।

নির্বাচন কমিশনে বাংলাদেশ ন্যাপের  দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী ৮৫  নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভাড়া দুটি কক্ষ থেকে দলটির কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। এই দুই কক্ষে দুটি কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার মেশিন, একটি টেলিভিশন, চারটি বড় টেবিল ও অর্ধশতাধিক চেয়ার এবং মওলানা ভাসানীর বেশ কিছু ছবি রয়েছে।

ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি

সেখানে বসে দলের মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটাই আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, এটি ভাড়া নেওয়া। এখান থেকে দল পরিচালনা হয়।’

বাংলাদেশ ন্যাপের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩ বছর পর পর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। সবশেষ ২০১৫ সালে দলটির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ১১১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে ৫৫ সদস্য রয়েছে। তিন বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি দলটি। এরমধ্যে সব নেতাও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয় নন। সারাদেশে আহ্বায়ক কমিটিসহ ৩০ জেলায় কমিটি আছে বলে জানান দলটির মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া।

ন্যাপ ছবি ৩তিনি বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি ৫৫ সদস্যবিশিষ্ট। সারাদেশে ৩০টি জেলায় কমিটি আছে। উত্তরবঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি। অন্য জেলাগুলোতে রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকে।’

২০ দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপির কর্মসূচির ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ ন্যাপ-এর কার্যাক্রম। জোটের ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমেই দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। তবে এর বাইরে নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে ঘরোয়া আলোচনা সভার আয়োজন করে দলটি।

ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া

রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রসঙ্গে মহাসচিব বলেন, ‘ছোট দল, সেই হিসেবে সাধ্যমতো কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার চেষ্টা করি। বিভিন্ন দিবস ও ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি পালন করা হয়। এর বাইরে জোটের কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করি।’

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ২০২০ সালে মধ্যে পার্টির সর্বস্তরে ২০ শতাংশ নারী নেতৃত্ব আনার কথা থাকলেও বর্তমানে তা ১০ শতাংশ রয়েছে।

ন্যাপ ছবি ৫জানতে চাইলে চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বলেন, ‘আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে সংসদীয় রাজনীতিতে আমাদের ইতিহাস স্বতঃসিদ্ধ।’ আগামী দিনে দল হিসেবে বাংলাদেশ ন্যাপ রাজনীতিতে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

জেবেল রহমান গাণি আগামী নির্বাচনে নীলফামারী-১ এবং গোলাম মোস্তাফা ভূইয়া নরসিংদী -৩ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব গোলাম মোস্তাফা ভূইয়া বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান নীলফামারী-১ এবং আমি নরসিংদী-৩ থেকে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।