‘লক্ষ্য থেকে সরে গেছে’ অভিযোগ করে নুরের সংগঠন থেকে এক নেতার পদত্যাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ও এক্টিভিস্ট আরমান হোসাইন। শনিবার (২৪ এপ্রিল) বিকালে তিনি নিজেই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানান। পরে জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন তিনি।

পদত্যাগের বিষয়ে আরমান হোসাইন বলেন, ‘বাংলাদেশ যুব, ছাত্র ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের মাধ্যমে সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই বেগবান হবে বলে আমি  প্রত্যাশা করেছিলাম। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক তরুণ-যুবকদের সঙ্গে কাজ করে আমরা সেই লড়াইয়ের অংশ হতে চেয়েছি। কিন্তু বিগত প্রায় এক বছর যাবত বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদ এবং সামগ্রিকভাবে অধিকার পরিষদের সঙ্গে কাজ করার পর আমাদের উপলব্ধি হয়েছে  যুব,ছাত্র ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ সেই লক্ষ্য থেকে অনেকটা সরে গেছে।’

আরমানের অভিযোগ, নূরের সংগঠনে কতিপয় ব্যক্তির খেয়ালখুশি মতো সংগঠনকে পরিচালনার করার ফলে বেশিরভাগ কর্মীর আন্তরিক আগ্রহ এবং আত্মত্যাগ সত্ত্বেও সংগঠন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘অধিকার পরিষদের এখনও সুনির্দিষ্ট কোনও রাজনীতি নাই। সেই রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের জন্য সঙ্গতিপূর্ণ কোনও রকম সাংগঠনিক শৃঙ্খলা নাই এবং তা গড়ে তোলার কোনও উদ্যোগও অনুপস্থিত। তারওপর এসব গড়ে তোলার চেষ্টা করলে তার পথে পরিকল্পিত প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার মতো অবস্থা বিরাজমান আছে। তবে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও এর একটা রাজনৈতিক অভিমুখ তৈরি হয়েছে বলে অনেকের কাছে যেমন প্রতীয়মান হচ্ছে, তেমনি আমাদের কাছেও তা মনে হচ্ছে। তবে এই অভিমুখ রাষ্ট্র সংস্কারের লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার চেয়ে ভিন্ন দিকে।‘

তার দাবি, ‘সংগঠনের নেতৃত্ব যেই পথে সংগঠনকে পরিচালনা করছেন এবং অধিকার পরিষদের সঙ্গে আমার যে রাজনৈতিক বোঝাপড়া ছিল, আমি মনে করছি এই পথ তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আর যেই পথ ও পদ্ধতিকে আমরা নিজেরা রাজনৈতিকভাবে ভুল বা অগ্রহণযোগ্য মনে করি, সেই পথে সংগঠনকে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করার মতো আত্মপ্রবঞ্চনা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’

আরমান হোসাইন বলেন, ‘ফলে উভয়-পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির  প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং পরস্পরের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে সংকটের সময়ে সংগঠনের হাল ধরার জন্য সংশ্লিষ্ট পদে, নেতৃত্বে বিশ্বাস ও বিশ্লেষণে বিশ্বাসী যোগ্য মানুষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর জরুরি বলে মনে করছি। আজ ২৪ এপ্রিল তারিখ থেকে আমি  নিজেকে আমার সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এবং ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতায় আমরা বুঝতে পারি বাংলাদেশকে এই অবস্থা থেকে মুক্ত করতে দরকার রাষ্ট্র সংস্কারের রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা। অধিকার পরিষদের নেতৃত্ব সেই রাষ্ট্র সংস্কারের রাজনীতির জন্য সংগঠন গড়ে তোলার কথা বলায়, তাদের  অনুরোধে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে আমি  শ্রমিক অধিকার পরিষদের দায়িত্বে এসেছিলাম। দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য গণতন্ত্রকামী তরুণ-যুবকদেরকে সেই আন্দোলনে যুক্ত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য অধিকার পরিষদ সেই রাজনীতি থেকে যে কোনও কারণেই হোক অনেকটুকু সরে এসেছে।’