রেজা কিবরিয়া ও নুরের নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদের আত্মপ্রকাশ

অর্থনীতিবিদ ও গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে সদস্য সচিব করে নতুন দল ‘গণঅধিকার পরিষদ’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কার্যালয়ে এই দলের ঘোষণা দেওয়া হয়। দলটির স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জনতার অধিকার আমাদের অঙ্গীকার’।

৮৩ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিতে নানা পেশার মানুষ স্থান পেয়েছেন বলে জানান নুর। দলটির ঘোষণাপত্রে নুর বলেন, ‘৫০ বছর হলো বাংলাদেশের বয়স। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা আজ প্রিয় দেশবাসীর সামনে হাজির হয়েছি মহান সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা করে, আমূল বদলে দেওয়ার বার্তা নিয়ে, নতুন করে বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে। বাংলাদেশের স্বপ্নহীন লাখ লাখ পরিবারের তরুণ সদস্য আমরা। যারা কোনও মানসম্পন্ন শিক্ষা পাইনি; উচ্চশিক্ষার জন্য কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখানে মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকুও জোটেনি। আমরা যে পথ, রাস্তা, মহাসড়ক ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতাম তাও নির্বিঘ্ন, নিরাপদ ছিল না। শিক্ষা শেষে চাকরির কোনও নিশ্চয়তা ছিল না, যা আজও নেই। চাকরির স্বপ্নটুকু আটকে ছিল কোটার বেড়াজালে।’

তিনি বলেন, ‘চাকরির ক্ষেত্রে কোটা সংস্কার করে মেধার অগ্রাধিকার; আর যোগাযোগ, যাতায়াত ও চলাচলের জন্য নিরাপদ সড়ক ও পরিবহনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা দেশের শাসক, নীতিনির্ধারক ও রাজনীতিকদের নজরে আসেনি কখনও। প্রাত্যহিক জীবনের এমন অজস্র সমস্যা ও সংকটে ডুবে আছে প্রিয় মাতৃভূমি। দেশবাসীর এমন মৌলিক, জরুরি ও মানবিক প্রয়োজনকে কোনও গুরুত্ব দেয় না রাজনীতিক ও আমলারা। কুৎসা, হামলা, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, কারাবরণ ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক বৈরী বাস্তবতায় আমরা কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছি। তাতে দেশজুড়ে পেয়েছি শিক্ষার্থীদের অভাবনীয় সমর্থন।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, ‘নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর ২০১৮-তে এটা প্রথম একটি যুগান্তকারী আন্দোলন, যা সরকারকে বাধ্য করেছে কোটা সংরক্ষণ নীতি বাতিল করতে। এই আন্দোলন ও এর বিজয়ের মধ্য দিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদ দেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠনে পরিণত হয়। একইসঙ্গে দেশের সব শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সরকার তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করতে বাধ্য হয়। সেখানে ব্যাপক নির্যাতন, ভোটে অনিয়ম ও কারচুপি করেও ছাত্র অধিকার পরিষদের বিজয় রোখা যায়নি। এই সাফল্য নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থার কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।’

নুর আরও বলেন, ‘আমরা আজ যখন একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিচ্ছি, তখন পৃথিবী দুটি বড় সংকট মোকাবিলা করছে। আজ সবার সম্মুখে দাঁড়িয়ে এই প্রত্যয় ঘোষণা করছি যে আমরা নানান ক্ষেত্রে সৃষ্টি হওয়া বহু স্তরবিশিষ্ট বৈষম্য লাঘব করে বাংলাদেশকে মানবিক উন্নয়নের প্রগতিশীল ধারায় স্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশন নিয়ে আন্দোলন করা তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। আমাদের আসল দাবি হলো, আমরা একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই। এটা ছাড়া নির্বাচনে নামার কোনও মানে হয় না। যারা এর আগে দুইবার প্রতারণা করেছে তারা যে আবার করবে না, সেটার ভরসা আমি করি না। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে অন্য সব দলের সঙ্গে আমরা আলোচনা করবো। আমি আশা করি, দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে তারা আমাদের সহযোগিতা করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কার সঙ্গে জোট করবো সেটা তখনকার পরিস্থিতি দেখে আমরা ঠিক করবো। আমাদের পরিকল্পনা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া। তবে পরিস্থিতির ওপর তা নির্ভর করছে।’

এ সময় রেজা কিবরিয়া আরও জানান, দলটি যেহেতু গণমানুষের সেহেতু গণমানুষের টাকায় এই দল পরিচালিত হবে।

অনুষ্ঠানে দলটির ২১ দফা খসড়া কর্মসূচি পাঠ করেন যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান। তাছাড়া দলটির চারটি মূলনীতির কথা জানান তিনি। এগুলো হচ্ছে, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার এবং জাতীয় স্বার্থ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।