ইসির সমালোচনায় মুখর কাদের সিদ্দিকী

চলমান রাজনৈতিক সংলাপে সময় নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিরপেক্ষতা হারিয়েছে বলে মনে করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী (বীর উত্তম)। পাশাপাশি ইভিএম নিয়ে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কারের ঘোষণা, তলোয়ার-রাইফেল প্রসঙ্গ, কুমিল্লা সিটিতে এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশসহ নানা প্রসঙ্গ তুলে সমালোচনায় মুখর ছিলেন এই জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক।

বুধবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সংলাপে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, 'আমরা আপনাদের মতামত শুনিনি, কিন্তু পত্রিকায় দেখেছি। সংলাপে বিএনপির জন্য দুই ঘণ্টা, আওয়ামী লীগের জন্য দুই ঘণ্টা বরাদ্দ, বাকিদের জন্য একঘণ্টা। এটা আপনাদের সিদ্ধান্ত কিনা? যদি আপনাদের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তবে আপনারা আপনাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।'

প্রতিবেশী দেশ ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘উনারা যখন দল গঠন করেছিলেন তখন মাত্র দুটি সিট পেয়েছিলেন। আজকে প্রায় তিনশ’ সিটের অধিকারী তারা। সেই জন্য নির্বাচন কমিশন যদি আগে থেকেই বড় দল, ছোট দল- এটা যদি বিভাজন করেন, তাহলে শুধু ভোটারদের প্রতি কেন, আমাদের প্রতিও একটা বিমাতাসুলভ আচরণ হয়। সব দলকে এক মাপে বিচার করুন। ক্ষমতা আজ আছে কাল নেই। ক্ষমতা খুবই ক্ষণস্থায়ী।’

গত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন দেশকে ডুবিয়েছে দাবি করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘তার আগের জনও তা-ই করেছেন। তার আগের জনও কম বেশি তা-ই করেছেন। আমার দেখা মতে, আবু হেনার মতো শক্তিশালী মেরুদণ্ডওয়ালা নির্বাচন কমিশনার দ্বিতীয় কেউ হননি।’

ইভিএমে ভুল ধরিয়ে দিলে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা নিয়েও কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘কমিশনের পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়।’ জবাবে সিইসি বলেন, ‘এটা ভুলে একজন নির্বাচন কমিশনার দিয়ে ফেলেছেন। আমার মুখ থেকে এমন শব্দ আমি উচ্চারণও করিনি। এটা বিভ্রান্তি।'

কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে এমপি বাহারকে নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েন সিইসি। সিদ্দিকী বলেন, ‘ক্ষমতা থাকলে কেন নির্দেশনা মানাতে পারলেন না। আর ক্ষমতা না থাকলে তাকে সেই নির্দেশনা দিলেন কেন? সিইসি তার জবাবে বলেন, ‘তারা তাড়াহুড়া করতে গিয়ে নির্বাচনি কার্যক্রম থেকে ভেতরে থাকতে না বলে এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছিল। তার ব্যাখ্যাটা সে সময় দিয়েছি।’

তলোয়ার-রাইফেল নিয়ে বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন,  ‘আপনার ব্যাখ্যা আমি গ্রহণ করেছি যে এটা কথার কথা বলেছেন।’

নীতির সঙ্গে কখনও বিরোধ হলে সিইসিকে পদত্যাগ করার পরামর্শও দেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘এতে আপনি মাথার মণি হয়ে থাকবেন। দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে পৌরুষের লক্ষণ, মানুষের লক্ষণ। এছাড়া দলগুলোর জন্য যত দরজা খোলা রাখবেন, তত মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন। কোনও ভুলের জন্য ছাগলের খুঁটি ধরে থাকবেন না। ভুল বুঝতে পারলে স্বীকার করবেন, দেখবেন আপনার মর্যাদা বাড়ছে, ক্ষমতা বাড়ছে।’

কাদের সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘অনেকে বলেন তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন করবো না। নির্বাচনের সময় সরকার কে? আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন আমি বলবো, তফসিল ঘোষণা করার পর সরকার কে? যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনি প্রধানমন্ত্রী, যিনি রাষ্ট্রপতি তিনি রাষ্ট্রপতি। কিন্তু আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশনই রাষ্ট্রপতি, নির্বাচন কমিশনই প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আপনি সেই ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন কী পারবেন না, সেটা মেরুদণ্ডের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী তার গেটের বাইরে বের হবেন কী হবেন না, সেটাও ইসিকে জিজ্ঞেস করতে হবে।’