আওয়ামী ওলামা লীগের কমিটি অনুমোদনের দাবি, তালিকা সামাজিক মাধ্যমে

সদ্য স্বীকৃতি পাওয়া আওয়ামী ওলামা লীগ কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এমন দাবি করেছেন ওলামা লীগের নেতারা। এমনকি কমিটির তালিকার কাগজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা কে এম আবদুল মমিন সিরাজীকে সভাপতি, মাওলানা সাগর আহমেদ শাহীনকে কার্যকরী সভাপতি এবং মো. আমিনুল হক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) রাতে ওলামা লীগের কমিটি অনুমোদনের দাবি করেন কে এম আবদুল মমিন সিরাজী। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপ দফতর সম্পাদক সায়েম খান বলেন, ‘এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।’

সংগঠনের সহ-সভাপতির ১৫টি পদের মধ্যে ১২ জনের নাম রয়েছে তালিকায়। তারা হলেন– হাফেজ মাওলানা সাগর আহমেদ শাহিন, হাফেজ মো. দেলোয়ার হোসেন (সাবেক সদস্য সচিব), মাওলানা নুর মোহাম্মদ আহাদ আলী সরকার, মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী, হাফেজ মাওলানা আবদুস ছাত্তার, হাফেজ মাওলানা সাইফুল ইসলাম, হাফেজ মাওলানা মুফতি শেখ মো. কামাল উদ্দিন কাসেমী, হাফেজ মাওলানা সুলাইমান, হাফেজ ক্বারী মাওলানা আব্দুল খালেক ছানুবী, হাফেজ মাওলানা ইদ্রিছ আলম আল কাদেরী, মাওলানা মো. আবু ইউসুফ আল হেলালী, হাফেজ আব্দুল বারিক তালুকদার ও মাওলানা মো. মনোয়ার হোসেন আনোয়ার।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে কমিটির এই তালিকা

যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ চারটি উল্লেখ করা হলেও মাওলানা মো. কাজী অলি উল্লাহ ভূইয়ার নাম জানানো হয়। বাকি তিনটি পদ শূন্য রয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদকের ১০ পদের মধ্যে পাঁচটিতে আছেন– হাফেজ মা. আনোয়ার হোসেন জুয়েল, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল ইসরাফিল, মাওলানা রবিউল আলম সিদ্দিকী, মাওলানা মো. সোলাইমান নোমানী ও খন্দকার মো. সাজ্জাদুন নূর। 

এছাড়া দফতর সম্পাদক হলেন শায়েখ মুফতি আলমগীর হোসেন, শিক্ষা ও মানব সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মো. আলতাফ হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মাওলানা কাজী রবিউল ইসলাম, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মুফতি মাওলানা মো. হাসানুজ্জামান চিশতী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী হাফেজ মো. বিল্লাল পাটোয়ারী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা আল্লামা মুফতি মিজানুর রহমান মিয়ানী। 

এই কমিটিতে ১৫টি সহ-সম্পাদক পদের মধ্যে মাত্র একজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি হলেন, অধ্যাপক মাওলানা খ. ম. শাহাদাৎ হোসাইন মিজান।

বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। ২০ সদস্যের মধ্যে চারজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন– পীরজাদা পীর আকতার হোসেন বোখারী, মাওলানা আব্দুল আলীম আজাদী, ড. মাওলানা তৌহিদুল ইসলাম ও কাজী মাওলানা মো. আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী। যদিও এই পদে এখনও ১৬টি পদ শূন্য রয়েছে।

গত ২০ মে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী ওলামা লীগের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দীর্ঘদিন নানা বিতর্কে জড়িত থাকা ওলামা লীগকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলন শেষে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের নাম আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়। পরে তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শীর্ষ এই দুই পদে নাম ঘোষণা করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান। তিনি দুপুরের খাবারের বিরতির পর উপস্থিত নেতাকর্মীদের কাছ থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নাম আহ্বান করেন। এ সময় সভাপতি পদে ২০ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৩১ জন আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাদের ডেকে এনে মঞ্চের দুই প্রান্তে বসিয়ে উভয় পদে একক প্রার্থী ঠিক করতে বলেন গোলাপ।

পরে পদপ্রত্যাশী নেতারা আবদুস সোবহান গোলাপকে জানালে তিনি উপস্থিতিকে জানান, সভাপতি পদে ২০ প্রার্থীর মধ্যে ১৫ জন কে এম আব্দুল মোমেন সিরাজীকে সমর্থন দিয়েছেন। বাকি ৫ জন এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করলেও অন্য কোনও প্রার্থীর পক্ষে একমত হতে পারেননি। আর সাধারণ সম্পাদক পদে ৩১ জনের মধ্যে ১৩ জন দেলোয়ার হোসেনকে সমর্থন দিলেও বাকিরা ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন।

সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, ‘আওয়ামী ওলামা লীগকে সহযোগী সংগঠন করা হবে নাকি সমমনা সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, এ বিষয়টি ঠিক করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওলামা লীগের একটি ইচ্ছে ছিল যে সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠিত হবে। তার জন্য সময় লেগেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আজ তা সম্ভব হয়েছে। আমি ১০১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিচ্ছি যাতে ত্যাগী ও সিনিয়র নেতারা স্থান পাবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কমিটিতে যেন বাস্তবতার ও রাজনৈতিক আদর্শের প্রতিফলন থাকে। নেতাদের অবশ্যই দলীয় শৃঙ্খলায় আসতে হবে। ওয়ান ইলেভেনের সময় রাজপথে ওলামা লীগের কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো। মাঝে কিছুটা স্বেচ্ছাচারিতা দেখা গিয়েছিল। তবে সেসব কাটিয়ে যেন একটি যোগ্য কমিটি তৈরি হয়। দলাদলি করে বদনাম কামাবেন না। এসব করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’