আলোচনা সভায় গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা

‘সাইবার নিরাপত্তা আইনও নিবর্তনমূলক হয়ে উঠবে’

আগের মতোই সাইবার নিরাপত্তা আইনও নিবর্তনমূলক হয়ে উঠবে উল্লেখ করে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কেবল ‘পোশাক’ পরিবর্তন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে কেবলমাত্র কিছু জামিনযোগ্য ধারা বেড়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞার মধ্যে কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি। ফলে, আগের মতোই এই আইনও নিবর্তনমূলক হয়ে উঠবে।’

রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর)  জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন: বাকস্বাধীনতা হরণের নয়া হাতিয়ার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা জানান মঞ্চের নেতারা।

সভায় বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে বিদেশিদের দেখানোর জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের কেবল পোশাক পরিবর্তন করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ করা হয়েছে। কিছু জামিনযোগ্য ধারা বাড়িয়েছে, কিন্তু সেগুলোর সঙ্গে জরিমানার পরিমাণও বেড়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞাগুলো একই আছে। পুর্বের মতোই একই অভিযোগ এনে যেকোনও সময় আইনশৃঙ্গলা বাহিনী গ্রেফতার করতে পারবে।’’

দেশ গোল্লায় গেলেও সরকারের কিছু যায় আসে না বলে মন্তব্য করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বর্তমান সরকার তাদের ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থাকে আরও জোরদার না করে ক্ষমতায় টিকতে পারবে না। এতে দেশ গোল্লায় যাক, জাহান্নামে যাক, তাদের কিছুই আসে যায় না। বড় ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যাযজ্ঞ চালাতে হলেও তারা চালাতে পারে। কিন্তু এটা করতে চাইলেই কাউকে আমরা এটা করতে দিতে পারি না। সরকার পুরনো ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনকেই কেমলমাত্র একটি নতুন লেভেল লাগিয়ে সাইবার সিকিউরিটি আইন করেছে। এই আইনটি তারা (সরকার) আজকে যে ধরনের শাসন কায়েম রেখেছে, তার জন্য আপরিহার্য হয়ে গেছে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সবচেয়ে বড় আপত্তি ছিল, এই আইনের ধারাগুলোর ব্যাখ্যা স্পষ্ট ছিল না। ধারার যেহেতু কোনও স্পষ্টতা নেই, তাই এগুলো যেকোনও রকম ব্যাখ্যা করা যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একেবারে অবিতর্কিত তেমন না, স্বাধীনতার ঘোষণা কবে হয়েছিল, কে করেছিল— তারই তো কোনও স্পষ্টতা নেই।’

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাড. হাসনাত কাইয়ুম আরো বলেন, ‘এই সরকার তার বিরুদ্ধে যে রাজনীতি আছে, সেই রাজনীতিকে সাইবার ক্রাইম যেগুলো হতে পারে, সেগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে নতুন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন তৈরি করেছে। অতএব, এই আইন বাতিল করতে হবে। এটি করার জন্য প্রয়োজন হলে এই সরকারকে যেতে হবে, শাসন কাঠামোকে যেতে হবে। মানুষের বাকস্বাধীনতা, ভাবনার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, রাজনীতি করার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কোনও আইন দাঁড়াতে পারে না।’

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন— ভাসানী আনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আবু ইউসুফ সেলিম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলির সদস্য জুলহাসনাইন বাবু প্রমুখ।